
কসোভো
Featured Image: Wikimedia Commons.

সাল
১-১০০ রুমিরা বর্তমান কসোভো নামের অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিল। তখন অঞ্চলটিতে দারদানি নামের গোষ্ঠীর বসবাস ছিল। ধারণা করা হয়, দারদানিরা ইলিরীয় বা থ্রেসীয়।*
* কসোভার আলবানীয়দের দাবি, ইসলাম গ্রহণের আগে, তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন এই দারদানি বা ইলিরীয়রা। এই দাবি মোতাবেক তাঁরাই কসোভোর আদিম অধিবাসী। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে সার্বদের ‘আগ্রাসী’ হিসেবে দেখা হয়।
কিন্তু সার্বরা এই দাবি স্বীকার করেন না। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরাই কসোভোর আদিম অধিবাসী। কসোভার আলবানীয়রা ওসমানি শাসনের সময় আসা বহিরাগত।
২ হাজার বছর ধরে এই বাহাস চলছে, বলাই বাহুল্য কোন মীমাংসা হয় নাই।
৫০১-৬০০ স্লাভরা বর্তমান কসোভোয় বাস করতে শুরু করল। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ বাইজেন্টাইনদের হাত থেকে ফসকে গেল। এটি হয়ে উঠল একটি বিসংবাদিত সীমান্ত এলাকা।
১১০১-১২০০ বর্তমান সার্বিয়া বর্তমান কসোভোর নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেল। কালক্রমে কসোভো সার্বীয় রাজত্বের কেন্দ্র হয়ে উঠল। এই শতাব্দীতে অঞ্চলটিতে প্রচুর সার্বীয় অর্থোডক্স গির্জা ও মঠ নির্মিত হতে দেখা যায়।
১৩৮৯ জুন ২৮ কসোভো মাঠের যুদ্ধে ওসমানি তুর্কিরা সার্বদের হারায়। বলকানে ওসমানি সুলতানশাহির পাঁচ শতাব্দীর শাসনের শুরুয়াত। কালক্রমে কসোভার আলবানীয়রা দেশটির সংখ্যাগুরু হয়ে উঠবে।
১৯১২ ওসমানি তুর্কিদের থেকে কসোভো ছিনিয়ে নিল সার্বরা।*
* সার্ব জাতিবাদীরা এই ঘটনাকে “বিজাতীয় ও বহিরাগত মুসলমানদের” হাত থেকে কসোভোর মুক্তি হিসেবে দেখেন, অন্যদিকে কসোভার আলবানীয়রা দেখেন সার্ব দখলদারিত্ব হিসেবে।
১৯১৩ লন্ডন চুক্তি, কসোভোর ওপর সার্বিয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হল।
১৯১৪-১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
১৯১৫ সাময়িকভাবে কসোভোর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাল সার্বিয়া।
১৯১৮ কসোভো আনুষ্ঠানিকভাবে আধুনিক সার্ব রাজত্বের অঙ্গীভূত হল।
১৯৩৯-৪৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
১৯৪১ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কসোভোর প্রায় পুরোটাই ফ্যাশিস্ত ইতালি-নিয়ন্ত্রিত বৃহত্তর আলবানিয়ার অংশ হয়ে যায়।
১৯৪৬ যুদ্ধের পর কমিউনিস্টরা যুগোস্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করলে সার্বিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি প্রদেশে পরিণত হয় কসোভো।*
* ছয়টি প্রজাতন্ত্রের সমষ্টি ছিল এই ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। সার্বিয়া (রাজধানী বেলগ্রেড), মন্টেনেগ্রো (রাজধানী টিটোগ্রাদ), স্লোভেনিয়া (রাজধানী জুবজানা), ক্রোয়েশিয়া (রাজধানী জাগরেব), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (রাজধানী সারায়েভো), এবং ম্যাকিদোনিয়া (রাজধানী স্কোপজে)। এদের মধ্যে সার্বিয়ায় দুটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ ছিল: কসোভো (রাজধানী প্রিস্টিনা) ও ভোজভোদিনা (রাজধানী নোভি সাদ)।
১৯৭৪ যুগোশ্লাভিয়ার সংবিধানে কসোভোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হল।
১৯৮১ কসোভোয় স্বাধীনতাকামী আন্দোলন দমন করল যুগোস্লাভ সেনারা।
১৯৮৭ যুগোস্লাভিয়ার ফেডারেল ব্যবস্থার ভেতরে সার্বীয় প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হলেন স্লোবোদান মিলোসেভিচ। মিলোসেভিচের কসোভো সফর। সংখ্যাগুরু আলবানীয়দের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সার্বদেরকে উত্তেজিত করলেন।
১৯৮৮ কসোভোয় সামরিক আইন জারি করলেন স্লোবোদান মিলোসেভিচ।
১৯৮৯ কসোভোর স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে ব্রতী হলেন মিলোসেভিচ।
১৯৯০ সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন কসোভার আলবানীয়রা।
১৯৯২ কসোভোর আত্মস্বীকৃত প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হলেন ইব্রাহিম রুগোভা।
১৯৯৩ কসোভো লিবারেশন আর্মি (কেএলএ) প্রতিষ্ঠিত হল।
১৯৯৮ সার্ব শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল কসোভো লিবারেশন আর্মি (কেএলএ)। কসোভার আলবানীয়দের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান শুরু করলেন স্লোবোদান মিলোসেভিচ। কসোভো যুদ্ধের সূচনা। বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কসোভার আলবানীয় নাগরিক কসোভো ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
নোয়েল ম্যালকম, কসোভো: আ শর্ট হিস্ট্রি।
মিরান্ডা ভিকার্স, বিটউইন সার্ব অ্যান্ড আলবানিয়ান: আ হিস্ট্রি অফ কসোভো।
১৯৯৯ বিলুপ্তপ্রায় যুগোস্লাভিয়ার শেষ দুই প্রজাতন্ত্র সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিরুদ্ধে ৭৮ দিন ব্যাপী বিমান হামলা পরিচালনা করল ন্যাটো। কসোভো থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হলেন মিলোসেভিচ। বহু বেসামরিক সার্ব নাগরিক কসোভো ছেড়ে পালালেন। কসোভো সার্বিয়ার ভেতরে জাতিসংঘের প্রটেক্টোরেটে পরিণত হল। জাতিসংঘ স্থাপন করল কসোভো পীস ইমপ্লিমেন্টেশন ফোর্স (কেফোর)। কসোভো লিবারেশন আর্মি (কেএলএ) অস্ত্র সমর্পণে রাজি হল। কসোভো যুদ্ধের সমাপ্তি।*
* (Judah 2008)য়ের হিসেবে কসোভো যুদ্ধে প্রায় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের শিকার হন।
১৯৯৮-৯৯ সালে সার্বিয়া আর কেএলএ দুই পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করে। ন্যাটোর বিমান হামলায়ও বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ঘটে। এইসব যুদ্ধাপরাধের দুটি সংক্ষিপ্ত ঘটনাপঞ্জি নিচে দেখুন:
http://archive.today/QPqRT
http://archive.today/G8KHi
২০০৪ মিত্রোভিচা শহরে সার্ব-আলবানীয় দ্বন্দ্বে ১৯ জনের মৃত্যু। কসোভোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নিবাচিত হলেন ইব্রাহিম রুগোভা, দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেন সাবেক বিদ্রোহী কমাণ্ডার রামুশ হারাদিনাজ। কসোভোয় সংখ্যালঘু সার্বরা এই নির্বাচন বয়কট করেন।
২০০৫ দ্য নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরস্থ জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হলেন রামুশ হারাদিনাজ, কসোভোর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন।
২০০৬ সার্বিয়া গণভোটের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করল যেখানে কসোভোকে দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখানো হল।
২০০৮ ফেব্রুয়ারি ১৭ কসোভো সার্বিয়া থেকে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করল, সার্বিয়া বলল এই স্বাধীনতার ঘোষণা অবৈধ। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইওরোপীয় দেশগুলো কসোভোকে স্বীকৃতি দিল। রাশিয়া কসোভোকে সার্বিয়ার অংশ বলে বিবেচনা করে।*
* জাতিসংঘের সদস্য-রাষ্ট্র নয়। তবে জাতিসংঘের শতাধিক সদস্য-রাষ্ট্রের স্বীকৃতিলাভ করেছে কসোভো। সার্বিয়া কসোভোর ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে থাকে।
জাতিসংঘের কাছ থেকে কসোভোর নিরাপত্তা রক্ষার ভার গ্রহণ করল ইওরোপীয় ইউনিয়ন মিশন (ইউলেক্স)।
২০১১ মার্চ কসোভোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন আতিফেতে জাহজাগা।
২০১৩ এপ্রিল কসোভো আর সার্বিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে ঐতিহাসিক চুক্তি। উত্তরের সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে উঁচু মাত্রার স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হল। দুই পক্ষই এই ইস্যুতে সম্মত হল যে, পরস্পরের ইইউ-ভুক্তি ঠেকানোর চেষ্টা করবে না।
২০১৭ সেপ্টেম্বর একটি নতুন সরকার গঠন করার দায়িত্ব পেলেন রামুশ হারাদিনাজ।
২০১৯ জুলাই নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগস্থ জাতিসংঘের একটি যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আদালত সন্দেহভাজন হিসেবে তলব করায় হারাদিনাজ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।
অক্টোবর সংসদীয় নির্বাচনে জিতল বিরোধী দল ভেতেভেনদোজে ও দ্য ডেমোক্রেটিক লীগ অফ কসোভো (এলডিকে)।
২০২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হলেন ভেতেভেনদোজের আলবিন কুর্তি।
জুন প্রধানমন্ত্রী হলেন এলডিকের আবদুল্লা হোতি।
নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগস্থ জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় হাশিম থাচি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।
২০২১ মার্চ দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেন ভেতেভেনদোজের আলবিন কুর্তি।
এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হলেন সাবেক স্পীকার জোসা ওসমানি।
২০২২ কসোভো সরকার জাতিগত সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলায় সার্বিয়ার ইস্যু করার গাড়ির নম্বর প্লেট কসোভোর ইস্যু করা গাড়ির নম্বরপ্লেট দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করলে জাতিগত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল।
তথ্যসূত্র
BBC. 2022. “Kosovo profile – Timeline.” BBC, November 25.
https://www.bbc.com/news/world-europe-18331273
Judah, Tim. 2008. Kosovo: What Everyone Needs to Know. New York: Oxford University Press.
নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।
অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ
দিব্যপ্রকাশ । বাতিঘর । বইবাজার । বইয়ের দুনিয়া । বইফেরী । বুক হাউজ । ওয়াফিলাইফ । রকমারি