Featured Image: Wikimedia Commons.
সাল
ষষ্ঠ-নবম শতাব্দী কালিমান্তানের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের পুনি রাজ্য এসময় চীনকে খাজনা প্রদান করছে।
৯৭৭ চীনা ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রুনাইয়ে* ইসলামের আগমন ঘটল।
* ব্রুনাইয়ের পুরো নাম হচ্ছে নিগারা ব্রুনাই দারুসসালাম। নিগারা সংস্কৃত নগর থেকে এসে থাকতে পারে, যদিও মালয়া ভাষায় নিগারা মানে ‘দেশ’। দারুসসালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ ‘শান্তির নিবাস‘।
১২৬৪ ব্রুনাইয়ের রঙ্গাসে সমাধিস্থ হলেন চীনা মুসলমান পু কুং চিহ-মু।
১৩৭০ জনৈক চীনা ঐতিহাসিক তাঁর একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, এসময় ব্রুনাইয়ের রাজা ছিলেন মা-হো-মু-সা। অনেকে মনে করেন, নামটি প্রকৃতপক্ষে মাহমুদ শাহ। ব্রুনাইয়ের ঐতিহাসিকদের মতে, তার নাম মুহাম্মদ শাহ।
কিন্তু ব্রুনাই যাদুঘরের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক রবার্ট নিসাল এ ব্যাপারে একটি ভিন্ন তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, মা-হো-মু-সা এসেছে ‘মহা মোক্ষ’ থেকে। এটি বৌদ্ধ নাম; এবং এসময় ব্রুনাইয়ের যিনি শাসক ছিলেন, তিনি মুসলমান ছিলেন না।
নিসাল দাবি করেছেন, ব্রুনাইয়ের শাসকদের ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া আরো কয়েকশো বছর পরের ব্যাপার।
১৪০৫-১৫ ব্রুনাইয়ের প্রথম সুলতান আওয়াং আলাক বিতাতার রাজত্বকাল। তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে সুলতান মুহাম্মদ উপাধি নিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, ব্রুনাই সুলতান মুহাম্মদ দ্বারা আবিষ্কৃত।
১৪১৫-২৫ ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় সুলতান পাতিহ বারহাইয়ের রাজত্বকাল। তিনি সুলতান মুহাম্মদের ভাই ছিলেন। ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তাঁর নাম হয় সুলতান আহমাদ।
১৪২৫-৩৩ ব্রুনাইয়ের তৃতীয় সুলতান শরিফ আলির রাজত্বকাল। সুলতান আহমাদের মেয়ের জামাই। অনেকে মনে করেন, তিনি আরব থেকে এসেছিলেন, এবং নবিবংশের মানুষ ছিলেন।
এসময়ই কখনো ব্রুনাই মাজাপাহিত সাম্রাজ্যের সামন্তরাজ্য হয়। ব্রুনাইয়ের সুলতানরা এই সাম্রাজ্যের অধীনে শাসনকার্য চালাতেন। তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতেন বর্তমান সারাওয়াক ও সাবাহ’য়ের সম্পূর্ণ উপকূল, সুলু দ্বীপপুঞ্জ, এবং বোর্নিও অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম উপকূল।
১৫২১ ব্রুনাই পরিভ্রমন করলেন স্প্যানিশ নাবিক হুয়ান সেবাস্তিয়ান দেল কানো। ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান ব্রুনাইয়ের সুলতানদের কাছ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো দখল করে নিলেন।
১৫৭৮ ব্রুনাই থেকে স্পেন কাস্তিল যুদ্ধে লিপ্ত হল।
ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রুনাই এসময় একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক রাজ্য হয়ে উঠছে। সাবাহ ও সারাওয়াক আন্দোলনের জন্ম।
অষ্টাদশ শতাব্দী ব্রুনাইয়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কমতে শুরু করল।
১৮৩৯ ব্রুনাইয়ে ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জেমস ব্রুকের আগমন।
১৮৪১ ব্রুনাইয়ের সুলতান দ্বিতীয় ওমর আলি সাইফুদ্দিন স্থানীয় বিদ্রোহ দমনে সহায়তা করার পুরস্কার হিসাবে জেমস ব্রুকের হাতে সারাওয়াকের নিয়ন্ত্রণভার তুলে দিলেন।
১৮৪৩-১৯১৭ সারাওয়াকে ‘শ্বেত রাজার’ পর্ব।
১৮৪৬ লাবুয়ান দ্বীপ ব্রিটিশদের হাতে চলে যাওয়ার ফলে ব্রুনাই তার বর্তমান আকার ধারণ করল।
১৮৪৯-৫৪ সিঙ্গাপুর আর বোর্নিওর মধ্যবর্তী নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করা মালয়া জলদস্যুদেরকে পরাস্ত করল ব্রিটেন।
১৮৮৮ ব্রুনাই লিম্বাং অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল এবং ব্রিটেনের একটি প্রটেক্টরেটে পরিণত হল।
১৮৮৮-১৯৮৪ ব্রুনাই এসময় কার্যত ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্য ছিল।
১৯০৬ এসময় থেকে ব্রুনাই কার্যত ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে, সুলতান নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে আছেন।
১৯২০ ব্রুনাইয়ে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হল।
১৯২৯ ব্রুনাইয়ে তেল খননকার্য আরম্ভ হল।
১৯৪১-৪৫ ব্রুনাইয়ে জাপানি উপনিবেশিক শাসনের কাল।
১৯৪৬ ব্রুনাইয়ে ব্রিটিশ বেসামরিক প্রশাসন পুনর্গঠিত হল।
১৯৫০ ব্রুনাইয়ের সুলতান হিসাবে অভিষিক্ত হলেন তৃতীয় ওমর আলি সাইফুদ্দিন।
১৯৫৯ ব্রিটিশরা ব্রুনাইকে স্বশাসন প্রদান করল এবং দেশটির ইতিহাসের প্রথম সংবিধান গৃহীত হল। এই সংবিধান ব্রুনাইকে একটি সুলতানশাহি’তে পরিণত করল। সংবিধানে মালয়া ভাষাকে ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রভাষা আর ইসলামকে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হল।
১৯৬০ কথিত ‘ব্রুনাই বিপ্লব।’
১৯৬২ সুলতান তৃতীয় ওমর আলী সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল বামপন্থীদের ব্রুনাই পিপলস পার্টি। দলটির দাবি ছিল, ব্রুনাইকে মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে*; এবং সুলতানশাহির বিলোপ ঘটাতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ব্রুনাইয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
* ব্রুনাইয়ের সংখ্যাগুরু নৃ গোষ্ঠী (ethnic group) মালয়ারা।
১৯৬৩ ব্রুনাইয়ের সুলতান জানালেন, তিনি ব্রুনাইয়ের মালয়েশিয়া ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তিকরণে আগ্রহী নন; এরচে ব্রিটেনের ডিপেন্ডেন্সি থাকতেই বেশি পছন্দ করবেন।
১৯৬৭ ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন হাসানাল বলখিয়া মুয়াজ্জেদিন ওয়াদুদুল্লাহ।
১৯৭২ ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিল ব্রুনাই সরকার।
১৯৮০ প্রকাশিত হল রবার্ট নিসালের নোটস অন সাম কন্ট্রোভার্সিয়াল ইস্যুজ ইন ব্রুনাই হিস্ট্রি।
১৯৮৪ জানুয়ারি ১: ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করল ব্রুনাই। ব্রুনাইকে ৪টি প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করা হল। এগুলো হচ্ছে বেলাইত, ব্রুনাই-মুয়ারা, তেমবুরোং, এবং টুটং।*
* ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ান ব্রুনাই-মুয়ারার অংশ।
সেপ্টেম্বর ২১: জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করল ব্রুনাই।
১৯৮৫ ব্রুনাই ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (বিএনডিপি) বৈধতা দিল ব্রুনাই।
১৯৮৬ ব্রুনাই ন্যাশনাল সলিডারিটি পার্টিকে (বিএনএসপি) বৈধতা দিল ব্রুনাই।
১৯৮৭ অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) যোগ দিল ব্রুনাই।
১৯৮৮ বিএনডিপি ও বিএনএসপি’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।
১৯৯০ মালয়া ইসলাম বেরাজা বা মালয়া মুসলমান রাজতন্ত্র নামে একটি রাষ্ট্রীয় মতাদর্শ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে নিল ব্রুনাইয়ের সুলতানশাহি।
১৯৯৫ বিএনএসপি’কে সীমিত আকারে কাজের অনুমতি দিল ব্রুনাই। কিন্তু ব্যাপক রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এই পার্টি ধীরে ধীরে অক্রিয় হয়ে গেল। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটও) সদস্যপদ লাভ করল ব্রুনাই।
১৯৯৮ ব্রুনাইয়ের সুলতান তাঁর বড় ছেলে আল-মুহতাদি বিল্লাই’কে নিজের উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করলেন।
২০০০ রাষ্ট্রীয় কোষাগার তছরুপের দায়ে সুলতানের ছোট ভাই রাজকুমার জেফরি বলখিয়া’র বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা ঠুকে দিল ব্রুনাই। ব্রুনাই জানাল, অর্থনীতির বৈচিত্র্যময়করণে তার রাষ্ট্রীয় কর্মশক্তির ২৫ শতাংশ’কে তেলক্ষেত্র থেকে সরিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগ দেয়া হবে। একই লক্ষ্যে পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটান হবে।
২০০১ সপ্তম আসিয়ান সামিটের আয়োজক রাষ্ট্র হল ব্রুনাই।
২০০৪ সেপ্টেম্বর দুই দশক ধরে বন্ধ থাকার পর ব্রুনাইয়ের সংসদ পুনরায় চালু করলেন সুলতান।
২০০৫ একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন লাভ করল ন্যাশনাল ডেভলাপমেন্ট পার্টি।
২০০৭ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে যৌথভাবে একটি ‘রেইনফরেস্ট ঘোষণাপত্রে’ সই করল ব্রুনাই। নভেম্বর ব্রুনাইয়ের সর্বোচ্চ আদালতে আপীলে হেরে গেলেন রাজকুমার জেফরি বলখিয়া, তাঁকে রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপ করে অর্জিত সব সম্পদ ফেরত দিতে বলা হল। ডিসেম্বর ব্রুনাইয়ে চালু থাকা শারীরিক শাস্তিপ্রদানের সমালোচনা করল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
২০০৮ ব্রুনাইয়ে এবছর অভিবাসন আইন ভঙ্গ করার দায়ে ৬৮ জন বিদেশিকে চাবুক মারা হয়েছে। জুন: যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক ব্রুনাইয়ের রাজকুমার জেফরি বলখিয়া’য়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন।
২০০৯ এবছর প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে দেখা গেল, অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে ব্রুনাই সরকার।
২০১০ ফেব্রুয়ারি: ফ্রান্সের করস্বর্গ বিষয়ক কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত হল ব্রুনাই। জুন: জোরপূর্বক শ্রম আর জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তির একটি গন্তব্য হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার নজরদারি তালিকার অন্তর্ভুক্ত হল ব্রুনাই। ডিসেম্বর: মালয়েশিয়া আর ব্রুনাইয়ের সীমান্ত বিরোধের অবসান।
২০১৪ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে প্রথম পূর্ব এশীয় দেশ হিসাবে শরিয়া আইন গ্রহণ করল ব্রুনাই।
২০১৬ সেপ্টেম্বর: প্যারিস বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি অনুসমর্থন করল ব্রুনাই।
তথ্যসূত্র
রেহমান, তারেক শামসুর। ২০১৯। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি। ঢাকা: শোভাপ্রকাশ।
BBC. 2018. “Brunei profile – Timeline.” BBC, January 9, 2018.
https://www.bbc.com/news/world-asia-pacific-12990560
Church, Peter, ed. 2009. A Short History of South-East Asia. Singapore: Wiley.
নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।
অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ
দিব্যপ্রকাশ । বাতিঘর । বইবাজার । বইয়ের দুনিয়া । বইফেরী । বুক হাউজ । ওয়াফিলাইফ । রকমারি