Featured Image: Wikimedia Commons.
পূর্বসাল
অষ্টম শতাব্দী ইতালিতে প্রথম গ্রিক উপনিবেশগুলো স্থাপিত হতে শুরু করল।*
* গ্রিকরা আপেনাইন উপদ্বীপের দক্ষিণাংশকে ইতালিয়া বলে ডাকত। অর্থ: বাছুরদের দেশ। সেই সম্বোধন থেকেই দেশটির বর্তমান নাম এসেছে।
৭৫৩ স্থানীয় পশুপালক গোষ্ঠীগুলো টাইবার নদীর তীরে সাত পাহাড়ের মাঝে রুম নগরীর পত্তন ঘটাল।* কিংবদন্তী অনুসারে, রেমুস আর রোমুলাস নামের দুই ভাই যৌথভাবে রুম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা, নগরীর নামকরণ হয়েছে রোমুলাসের নামে। ইতালির প্রথম রাজা রোমুলাস।**
* সাত পাহাড়ের মধ্যে একটিতে ছিল রুমিদের দুর্গ। নাম তার ক্যাপিতোলিউম। আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট থেকে শুরু করে ক্যাপিটোল হিল পর্যন্ত অনেক নামই এসেছে প্রাচীন রুমিদের কাছ থেকে।
** রুমের আদিম অধিবাসীরা নিজেদেরকে বলতেন প্যাত্রিসিউস – পিতৃবংশীয়। প্রতিটি প্যাত্রিসিউস পরিবারকে বলা হত ফ্যামিলিয়া – পরিবার। প্যাত্রিসিউস প্রবীনদের পরামর্শসভাকে বলা হত সেনাতুস – সিনেট।
রাজা আর সিনেট মিলে রুম শাসন করতেন।
কিন্তু প্যাত্রিসিউস ছাড়াও আরেকটি জনগোষ্ঠী ছিল রুমে। প্লেবেইউস – সাধারণ মানুষ। এরা ছিলেন বহিরাগত, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, গরিব।
৫০৯ রুমে রাজতন্ত্র উৎখাত। ঠিক করা হল, এখন থেকে দুজন কনসাল শাসন করবেন রুম, বলাই বাহুল্য আসবেন তারা প্যাত্রিসিউসের মাঝ থেকে। প্যাত্রিসিউসরা এই শাসনব্যবস্থাটার নাম দিল রেস পাবলিকা, যা থেকে ইংরেজিতে রিপাবলিক শব্দটা এসেছে, যা বাংলা অনুবাদে প্রজাতন্ত্র।*
* লাতিনে রেস পাবলিকা বলতে জনগণের রাজত্ব বোঝালেও রুমিরা এই সময় জনগণ বলতে শুধু প্যাত্রিসিউসদেরকে বুঝত, যারা ছিল অভিজাত, এই প্রজাতন্ত্রে প্লেবেইউসদের – সাধারণ মানুষদের – কোন ভাগ ছিল না।
৪৭৫ নথিভুক্ত ইতিহাসে ইতালির এটনা পাহাড়ের প্রথম অগ্নুৎপাতটি সংঘটিত হয়।
তৃতীয় শতাব্দী প্যাত্রিসিউস আর প্লেবেইউসের সুদীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান ঘটে, এবং শেষ পর্যন্ত, প্লেবেইউসরা রুম নগরীরা নাগরিক হিশাবে প্যাত্রিসিউসদের সমান অধিকার লাভ করে। এই শতাব্দীর প্রথম দিকে রুমিরা দক্ষিণ ইতালির গ্রিক শহরগুলোকে দখল করে নেয়। ক্রমে, সমগ্র আপেনাইন উপদ্বীপ তাদের অধিকারে আসে।*
* ‘দিভিদে এত ইম্পেরা’ রুমিদের সাম্রাজ্যনীতি। ইংরেজিতে এর থেকে এসেছে ডিভাইড অ্যান্ড রুম, বাংলায় বলা হয় ভাগ কর ও শাসন কর। পরবর্তী সব সাম্রাজ্যই এই নীতি অনুসরণ করেছে।
২৬৪-১৪৬ রোম আর কার্থেজের* মধ্যে পিউনিক যুদ্ধ, এই যুদ্ধের অবসান ঘটে কার্থেজের ধবংসের মধ্য দিয়ে।
* আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলে ফিনিশীয় বণিকদের প্রতিষ্ঠা করা শহর। সামুদ্রিক বাণিজ্যে তাদের তুলনা মেলা ভার ছিল। বর্তমান তিউনিসিয়ায় অবস্থিত।
তৃতীয় ও দ্বিতীয় শতাব্দী রুমিরা দক্ষিণপূর্ব ইওরোপ ও এশিয়া মাইনর – বর্তমান তুরস্ক – জয় করে নেয়। সিরিয়া থেকে গ্রিস তাদের হাতে চলে আসে। রুমি সাম্রাজ্য পরিণত হয় এক বিশাল সাম্রাজ্যে।
কিন্তু সাফল্য একইসাথে নতুন সমস্যা তৈরি করে। সাম্রাজ্যের নানান জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণে দাস আমদানি করার কারণে রুমের চাষীরা বেকার হয়ে যায়, কারণ দাসদের দিয়ে কাজ করানো দাসমালিকদের জন্য অনেক বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে। সিসিলিতে দাসবিদ্রোহ অতি কষ্টে দমন করেছিল রুম।
গ্রাখি ভাইয়েরা ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে জমি বিলি করার একটা কর্মসূচি হাতে নিলেও সম্পত্তিবান শ্রেণির বিরোধিতার মুখে শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেন নি, তবে ৮০,০০০ নিঃস্ব চাষী পেয়েছিলেন জমি।
১৯৫/১৮৫-১৫৯ রুমি আফ্রিকার নাট্যকার তেরেন্সের আনুমানিক জীবনকাল, যিনি তাঁর মানবিক কোনোকিছুই আমার অনাত্মীয় নয় কথাটির জন্য বিখ্যাত।
১০৬ সিসেরোর জন্ম।
১০১ জুলিয়াস সিজারের জন্ম।
প্রথম শতাব্দী রোমে নির্মিত হল কলোসিয়াম।
৯৯ রুমি বিজ্ঞানী ও কবি লুক্রেসিয়াসের জন্ম।
৭৪-৭১ রুমি দাসমালিকদের বিরুদ্ধে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ। বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। ৬,০০০ দাসকে ক্রুশবিদ্ধ করে কাপুয়া থেকে রুমের পথ রাস্তার দুধারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।*
* ব্যর্থ হলেও স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ বিশাল গুরুত্ব রাখে। যুগে যুগে স্বাধীনতার পিয়াসীদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। প্রেরণা যুগিয়েছেন লড়াইয়ে।
৭০ রোমক কবি ভার্জিলের জন্ম।
৬০ সিজার, ক্রসাস, আর পম্পেই গঠন করলেন প্রথম ত্রিউমভিরেট।
৫৮ গলের – বর্তমান ফ্রান্সের – শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন সিজার।
৫৫ রুমি বিজ্ঞানী ও কবি লুক্রেসিয়াসের মৃত্যু।
৪৯ নিজের বাহিনী নিয়ে রুম আক্রমণ করলেন সিজার। গৃহযুদ্ধে অনায়াসে জিতলেন। নিজেকে ইম্পেরাতোর ঘোষণা করলেন, যা থেকে ইংরেজি এম্পেরর শব্দটি এসেছে, বাংলা অনুবাদে সম্রাট।
৪৪ জুলিয়াস সিজার আততায়িত।*
* সিজার রুমে একধরণের স্বেচ্ছাচারী একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এটা রুমের প্রথাগত অভিজাতদের পছন্দ হয় নি। তাই তারা সিজারকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়।
৪৩ মার্ক অ্যান্টনি, লেপিডাস, আর অক্টাভিয়ান গঠন করলেন দ্বিতীয় ত্রিউমভিরেট। মার্ক অ্যান্টনির নির্দেশে সিসেরোর শিরশ্ছেদ করা হল।
৩০ ক্ষমতায় এলেন অক্টাভিয়ান, ১৪ সাল পর্যন্ত থাকবেন।
২৩ অক্টাভিয়ান নিজের নাম বদলে অগাস্টাস রাখলেন। রুম প্রজাতন্ত্রের চরিত্র হারিয়ে বহু আগেই সাম্রাজ্যে পরিণত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে অগাস্টাসকেই প্রথম রুমি সম্রাট বিবেচনা করা হয়।
১৯ রোমক কবি ভার্জিলের মৃত্যু।*
* মৃত্যুর বছরই প্রকাশিত হয় তাঁর মহাকাব্য ঈনিড।
সাল
প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দী ব্রিটিশ দ্বীপগুলো থেকে দজলা ও ফোরাত নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত হল রুমি সাম্রাজ্য। প্রথম শতাব্দীর শুরুর দিকে কখনো রুমি ফিলিস্তিনের নাজারেথে নবি জেশুয়া মেসিয়ার আবির্ভাব ঘটে। গ্রিকে জেশুয়া মেসিয়ার অনুবাদ ইউসুস খ্রিস্তোস, সেখান থেকেই ইংরেজিতে জেসাস ক্রাইস্ট নামটি এসেছে।*
* জেশুয়া মেসিয়াহ-এর অনুসারীরা খ্রিস্টান নামে পরিচিত। শুরুতে খ্রিস্টানরা রুমি সম্রাটদের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হলেও ইতিহাসের এক বিচিত্র নিয়মে পরবর্তীতে খ্রিস্টানরাই রুমের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ে পরিণত হন। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তীর্থ ভ্যাটিকান রুম নগরীতে অবস্থিত।
৭৯ ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্নুৎপাতে রুমি সাম্রাজ্যের একটি রিসোর্ট ও বাণিজ্যনগরী পম্পেই ধবংস হয়ে গেল।
২৮৪ রুমি সৈন্যরা সম্রাটের রক্ষীবাহিনীর প্রধান দিওক্লেশিয়ানকে ধরে সম্রাট বানিয়ে দিল, ২১ বছর ধরে চলবে তার একনায়কতান্ত্রিক শাসন।
৩১৩ কন্সটান্টাইন গৃহযুদ্ধে জিতে মিলানের এডিক্ট জারি করলেন। খ্রিস্টধর্মের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হল। অচিরেই খ্রিস্টধর্ম রুমের রাজধর্মে পরিণত হবে।
৩৩০ কন্সটান্টাইন বসফোরাসের তীরে কন্সটান্টিনোপল নামের এক অপূর্ব শহর নির্মাণ করেন, যা আজকের তুরস্কের ইস্তানবুল নামে পরিচিত।
৩৯৫ সম্রাট থিওডোসিয়াসের মৃত্যু। সাম্রাজ্য তার দুই ছেলের মধ্যে ভাগ হয়ে গেল। চার শতাব্দীর রুমি সাম্রাজ্যের পতনের শুরু।
৪১০ জার্মানিক গোষ্ঠীগুলোর রোমকে প্রায় তছনছ করে ফেলেছে।
৪৭৬ পশ্চিম রুমি সাম্রাজ্যের পতন। তবে পুবদিকের রুমি সাম্রাজ্য টিকে ছিল। ইতিহাসে তা বাজনাতিন সাম্রাজ্য নামেই অধিক পরিচিত।
১০২৯-১২২০ সিসিলি আর দক্ষিণ ইতালি শাসন করছে নর্ম্যানরা।
১২৯৮ মার্কো পোলো তার এশিয়া সফর নথিবদ্ধ করলেন।
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দী ইতালীয় ‘রেনেসাঁ’ – নবজাগরণ – ইওরোপের কথিত মধ্যযুগের অবসান।
১৭৯৭ নেপোলিয়ানের ইতালি জয়।
১৮৬১ ইতালির পুনরেকত্রীকরণ। দেশটি একটি জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হল। সার্ডিনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ভিক্টর ইম্মানুয়েলকে ইতালির রাজা ঘোষণা করা হল, ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করবেন তিনি।
১৯১৫ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালি মিত্রপক্ষে যোগ দিল।
১৯১৯ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির কাছ থেকে ত্রিয়েস্তে, ত্রেন্তিনো, আর দক্ষিণ টাইরল লাভ করল ইতালি। ইতালির সোশালিস্ট পার্টির পত্রিকা আভান্তির সাবেক সম্পাদক বেনিতো মুশোলিনি এ-বছরই একটি আন্দোলন শুরু করেন যা কালক্রমে ন্যাশনাল ফ্যাশিস্ত পার্টির রূপলাভ করবে। এ-বছরের সেপ্টেম্বরে কবি গ্যাব্রিয়েলে দানুনজিও ইতালির ফিউমে শহরে ১৮৬ জন বিদ্রোহীর একটি অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন, যা ফ্যাশিস্তদেরকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে।
১৯২০-২২ রাশিয়ার বিপ্লব দ্বারা ইতালির শ্রমিকশ্রেণি উদ্বুদ্ধ হল। শ্রমিকরা সংঘবদ্ধভাবে কারখানা দখল করা শুরু করল। ইতালির ‘রেড ইয়ার্স’।*
* ১৯২০ সাল নাগাদ সোশালিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি।
১৯২০ বেনিতো মুশোলিনি বিমানচালনার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
১৯২১ ইতালির রাজতন্ত্রীরা ফ্যাশিস্তদের সাথে ফ্লার্ট করতে শুরু করল, উদ্দেশ্য ছিল ইতালিতে যেন রাশিয়ার বিপ্লব জাতীয় কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করা।
১৯২২ ‘মার্চ টু রোম’: মুশোলিনি ইতালির রাজধানী রোমে ৩ লক্ষ সশস্ত্র ফ্যাশিস্তকে প্রেরণ করার হুমকি দিলেন, যদিও এটা একটা ধাপ্পাবাজি ছিল, কারণ মুশোলিনির পক্ষে মাত্র ৩০,০০০ ব্ল্যাকশার্ট ছিল। ২৭/২৮ অক্টোবরের রাতে ফ্যাশিস্তরা মিলন ও অন্যত্র সরকারি অফিস দখল করে নিতে শুরু করল। রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইম্মানুয়েল মুশোলিনিকে ইতালিতে ডেকে পাঠালেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করলেন।*
* এভাবেই ইতালিতে বেনিতো মুশোলিনির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ফ্যাশিস্ত পার্টি ক্ষমতায় এল, ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দেশটি ফ্যাশিস্তদের কবজায় থাকবে।
১৯২৪ ফ্যাশিস্তরা সমাজতন্ত্রী নেতা জিওকমো মাত্তিওনিকে খুন করল, এতে জনমত মুশোলিনির বিরুদ্ধে চলে গেল।
নভেম্বর ১৯২৫ – ডিসেম্বর ১৯২৬ ইতালির সব রাজনৈতিক দল আর নাগরিক সংগঠনকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের অধীনে নিয়ে আসা হল। জনগণের সংগঠন করার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হল। মুশোলিনি ঘোষণা করলেন, “সবকিছুই রাষ্ট্রের ভেতরে, কিছুই রাষ্ট্রের বাইরে নয়, কিছুই রাষ্ট্রকে ছাড়া নয়।”
১৯২৫ জানুয়ারি ৩: মুশোলিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ পরিহার করে নিরঙ্কুশ ফ্যাশিবাদের রাজত্ব কায়েম করার ঘোষণা দিলেন। ক্রিসমাসের প্রাক্কালে মুশোলিনি নবগঠিত সরকারপ্রধান পদে বসলেন। সংসদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দেশ চালানোর ক্ষমতা পেলেন।
প্রকাশিত হল মার্ঘেরিতা সারফেত্তির দ্য লাইফ অফ বেনিতো মুশোলিনি।
১৯২৬ এপ্রিল ৭: ভায়োলেট গিবসন নামের এক আইরিশ অভিজাততন্ত্রী বেনিতো মুশোলিনিকে হত্যা করার একটা প্রচেষ্টা চালালেন, তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল।
১৯২৭ প্রকাশিত হল অগাস্তো তুরারির আ রেভল্যুশন অ্যান্ড আ লিডার।
১৯৩১ ইতালির ন্যাশনাল ফ্যাশিস্ত পার্টির সেক্রেটারি নিযুক্ত হলেন অ্যাচিলে স্টারাস।
১৯৩৩-৪৩ ফ্যাশিস্ত সরকার ও মুশোলিনির উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করতে দেশজুড়ে সংবাদপত্রগুলোর পেছনে ৪১০ মিলিয়ন লিরা খরচ করা হল।
১৯৩৪-৪২ ফ্যাশিবাদের পক্ষে টেনে আনতে ইতালির লেখক, শিল্পী আর বুদ্ধিজীবীদেরকে এ-সময়কালে ১.৫-১৬২ মিলিয়ন লিরা ভর্তুকি প্রদান করা হয়।
১৯৩২ মুশোলিনি ‘জনগণের কাছে যাওয়া’ কর্মসূচি শুরু করলেন।
১৯৩৩ উইনস্টন চার্চিল মুশোলিনিকে ‘রুমি জিনিয়াস’ সম্বোধন করলেন।
১৯৩৪ হিটলারের ভেনিস সফর।
১৯৩৫ ইতালি ইথিওপিয়া আক্রমণ করে নৃশংস হত্যালীলা চালায়। আদ্দিস আবাবায় মাত্র ৩ দিনে ২০,০০০ মানুষকে খুন করে রুডলফো গ্রাজিয়ানির নেতৃত্বাধীন ইতালীয়রা। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে প্রায় আড়াই লক্ষ ইথিওপীয় খুন হয়ে যান।*
* ইতালীয়রা শিশুদেরকে মাটিতে আছাড় দিয়ে হত্যা করত। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পেট চিরে ভ্রূন হত্যা করত। এইসব নৃশংসতা সাধারণ ইতালীয়দের কাছ থেকে গোপন রাখা হয় এবং যুদ্ধটাকে ‘সামন্তবাদের দ্বারা নিপীড়িত’ ইথিওপীয়দেরকে ‘স্বাধীনতা ও সভ্যতার’ স্বাদ দেয়া বলে চালানো হয়।
১৯৩৬ নাৎসি জার্মানির সাথে জোট বাঁধে ফ্যাশিস্ত ইতালি।
১৯৩৮ প্রকাশিত হল আসভেরো গ্রাভেলির স্পিরিচুয়াল ইন্টারপ্রিটেশনস অফ মুশোলিনি।
১৯৩৯ ইতালি আগ্রাসন চালিয়ে আলবানিয়া দখল করে নিল। এ-সময় থেকেই মুশোলিনির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। প্রকাশিত হল জর্জিও পিনির লাইফ অফ মুশোলিনি’র ইংরেজি অনুবাদ।
১৯৪০ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দেয় ইতালি। জুন ১০: ইতালি মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।* পূর্ব আফ্রিকার ব্রিটিশ সোমালিল্যান্ড দখল করে ইতালীয়রা।
* এই ঘোষণার ঠিক ১০ দিন পর থেকে মিত্রপক্ষ ইতালিতে বোমাবর্ষণ করতে শুরু করে।
১৯৪৩ মিত্রপক্ষ সিসিলিতে আক্রমণ চালিয়ে মুসোলিনিকে উৎখাত করল।* মিত্রপক্ষের সাথে অস্ত্রবিরতি সই করল ইতালি। ইতালি নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।
* জুলাই ২৪: ফ্যাশিস্তদের গ্র্যাণ্ড কাউন্সিল মুশোলিনির বিরুদ্ধে ভোট দিল, এর একদিন পরে রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইম্মানুয়েল মুশোলিনিকে গ্রেপ্তার করার হুকুম দিলে ফ্যাশিস্ত পার্টির একজন সদস্যও এর প্রতিবাদ করে নি।
১৯৪৪-৪৫ জার্মান নাৎসিরা কারাগার থেকে মুসোলিনিকে বের করে আনলেও শেষ রক্ষা হয় নি, ফ্যাসিবিরোধী পার্টিজানরা বেনিতো মুসোলিনিকে পাকড়াও করে ও তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
১৯৪৬ ইতালিতে গণভোট। ইতালীয়রা রাজতন্ত্র উৎখাত করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিল। রাজতন্ত্রের অবসান, ঘোষিত হল ইতালীয় প্রজাতন্ত্র।
১৯৪৮ ইতালিতে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হল। নতুন সংবিধানের অধীনে অনুষ্ঠিত হল নির্বাচন। ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এল।
১৯৪৯ ন্যাটোতে যোগদান করল ইতালি।
১৯৫১ ইওরোপীয় কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটিতে যোগদান করল ইতালি।
১৯৫৭ ইওরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাষ্ট্রগুলোর একটি ইতালি।
১৯৭৮ ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলডো মোরোকে অপহরণ ও হত্যা করল দেশটির সশস্ত্র বামপন্থী দল রেড ব্রিগেড। এ-বছরই দেশটিতে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া হয়।
১৯৮০ বোলোগনা স্টেশনের বোমা হামলায় ৮৪ জন নিহত, এই হামলার জন্য ইতালির উগ্র ডানপন্থীদেরকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
১৯৮৩ যুদ্ধোত্তর ইতালির প্রথম সমাজতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন বেত্তিনো ক্রাক্সি।
১৯৮৪ ইতালির রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা হারাল রুমি ক্যাথলিক মতবাদ।
১৯৯১ ইতালির কমিউনিস্টরা তাদের কমিউনিস্ট পার্টির নতুন নামকরণ করল – ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ দ্য লেফট।
১৯৯৩ দুর্নীতির কারণে পদচ্যুত হলেন সোশালিস্ট পার্টির ক্রাক্সি। দেশ ছেড়ে পালালেন। ২০০০ সালে ফেরারি দশায় তিউনিসিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৯৪ ইতালিতে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এল ফ্রিডম অ্যালায়েন্স, নব্য ফ্যাসিস্ট ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স এই জোটের অন্যতম শরিক ছিল।
১৯৯৬ ইতালিতে নির্বাচনে জিতল মধ্য-বামপন্থীদের অলিভ ট্রি অ্যালায়েন্স, দেশটির প্রধানমন্ত্রী হলেন রোমানো প্রোদি।
১৯৯৭ ইতালির উম্ব্রিয়া প্রদেশে ভূমিকম্পে চার জনের মৃত্যু।
১৯৯৯ ইতালির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন কার্লো আজেগলিও সিয়াম্পি।
২০০১ ইতালিতে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এল মধ্য-ডানপন্থীদের রাজনৈতিক দল ফোর্জা ইতালিয়া, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সিলভিও বার্লুসকোনি।
২০০২ ইতালির এটনা ও স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত ঘটল। দেশটির মুদ্রা হিশাবে লিরাকে প্রতিস্থাপিত করল ইওরো।
২০০৩ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ-বছর পর্যন্ত ইতালিতে ৫৯ বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে।
২০০৪ দুর্নীতির দায়ে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি।
২০০৬ ইতালির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মধ্য-বামপন্থী রোমানো প্রোদি। সিসিলীয় মাফিয়ার বার্নার্দো প্রোভেনজানোকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ইতালি থেকে কয়েকশ শান্তিরক্ষী লেবাননে গেলেন।
২০০৮ অনাস্থা ভোটে পদত্যাগ করল ইতালির প্রোদি সরকার, আবারও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হলেন সিলভিও বার্লুসকোনি। পরপর দুবছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ইতালি। এই প্রেক্ষিতে এ-বছর আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দা ঘোষিত হল।
২০০৯ ইতালির পার্বত্য অঞ্চল আবরুজ্জোতে ভূমিকম্প আঘাত হানল, এতে কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হল, কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হলেন।
২০১১ ক্ষমতার অপব্যবহার আর একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক পতিতার সাথে সেক্স করতে পয়সা দেয়ার দায়ে মিলানের একটি আদালত ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনিকে অভিযুক্ত করে বিচারের সম্মুখীন হতে নির্দেশ দিল। সিলভিও বার্লুসকোনির পদত্যাগ। একটি টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করলেন মারিও মন্টি।
২০১৩ সিলভিও বার্লুসকোনিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হল। তবে বয়সের বিবেচনায় তাঁকে জেল খাটার হাত থেকে রেহাই দিয়ে কমিউনিটি সার্ভিসে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণের দণ্ড দেয়া হল। সরকারি পদাধিকারী হওয়া থেকে দু-বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হল।
২০১৪ অর্থনৈতিক সংকট নিরসন করার অভিপ্রায়ে ফ্লোরেন্সের মেয়র মাত্তিও রেঞ্জির নেতৃত্বে ইতালিতে একটি বাম-ডান জোট সরকার গঠিত হল।
২০১৭ ইতালির ব্যাকিং সংকটের কেন্দ্রে থাকা দুনিয়ার প্রাচীনতম ব্যাংক মন্তে দেই পাশচি-র জন্য রাষ্ট্রীয় বেইলআউট অনুমোদন করলেন ইওরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিয়ন্ত্রকরা।
২০১৮ ইতালিতে একটি পপুলিস্ট জোট সরকার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এল, পশ্চিম ইওরোপের জন্য যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
২০২১ করোনাভাইরাস সৃষ্ট সংকটে বিশেষভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইতালিকে সংকট থেকে বের করে আনতে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক অফ ইতালির সাবেক গভর্নর মারিও দ্রাঘির একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করলেন।
২০২২ অক্টোবর: ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন জর্জিও মেলানি। ১৯৪৫ সালের পরে দেশটির সবচে ডানপন্থী সরকারের নেতা বিবেচিত হচ্ছেন তিনি।
তথ্যসূত্র
করোভকিন, ফিওদর। ১৯৮৬। পৃথিবীর ইতিহাস: প্রাচীন যুগ। দ্বিতীয় সংস্করণ। মূল রুশ থেকে হায়াৎ মামুদ কর্তৃক অনূদিত। মস্কো: প্রগতি প্রকাশন।
BBC. 2022b. “Italy Profile – Timeline.” BBC, December 9, 2022.
https://www.bbc.com/news/world-europe-17435616
Dikötter, Frank. 2020. Dictators: The Cult of Personality in the Twentieth Century. London: Bloomsbury.
Pavlovi´c, Zoran. 2004. Italy. Philadelphia: Chelsea House.
নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।
অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ
দিব্যপ্রকাশ । বাতিঘর । বইবাজার । বইয়ের দুনিয়া । বইফেরী । বুক হাউজ । ওয়াফিলাইফ । রকমারি