আফগানিস্তান

Spread the love

Featured Image: Wikimedia Commons.

বিশ্ব মানচিত্র ব্লগ

পূর্বসাল

৩২০০-২৩০০ হেলমান্দ সভ্যতা।

২২০০-১৭০০ আমু দরিয়া সভ্যতা।

২০৫০ ইন্দো-ইরানিরা এ সময় ইরান ও আফগানিস্তানে বসতিস্থাপন করছেন।

২০০০ আনুমানিক এ সময়ই উত্তরপূর্ব আফগানিস্তানে শোরতুগাই নামে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হল যার সাথে সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পার যোগাযোগ ছিল।

২০০০-১০০১ মধ্য এশিয়া থেকে বর্তমান ভারতের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও বর্তমান পাকিস্তানে যাযাবর আর্যভাষী গোষ্ঠীগুলোর আগমন, আফগানিস্তানে তারা ব্যাকট্রিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।

১৫০০-৫০০ গান্ধারা সভ্যতা।*
* আজকের পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন গান্ধারা অঞ্চল।

১৫০০-১০০০ আধুনিক পণ্ডিতদের হিসেবে, পারস্যের নবি জরাথুস্ট্রের জীবনকাল। জরাথুস্ট্রবাদের পবিত্র বই আবেস্তা নামে পরিচিত, এ সময়ই তা মৌখিকভাবে বিকশিত হতে শুরু করে। আবেস্তার সাথে ঋগ্বেদের বহু মিল পাওয়া গেছে।

৮০০-৭০১ এশিরীয়দের আফগানিস্তান জয়। এরা দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহার পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। যদিও এরা শাসনকে পোক্ত করতে পারে নি।

৭০০-৫৫০ আফগানিস্তানের প্রায় পুরোটাই মিদীয়দের নিয়ন্ত্রণে চলে এল।

৬২৮-৫৫১ পাহলবি উৎসগুলোতে দেয়া ইরানি নবি জরাদশতির জীবনকাল। এসব উৎসের ঐতিহাসিকতা খুব মজবুত না। সাম্রাজ্যিক প্রচারণা মনে হয়।

৫৫০ ইরানে কুরুশ* কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হল হাখমানেশি সাম্রাজ্য, ৩৩০ পূর্বসাল পর্যন্ত টিকে ছিল সাম্রাজ্যটি।
* ইংরেজিভাষী বিশ্বে সাইরাস দ্য গ্রেট নামে পরিচিত।

৫৫০-৩৩১ প্রাচীন ইরানের হাখমানেশি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল আফগানিস্তান। আফগানদের ওপর ইরানি সংস্কৃতির প্রভাব প্রায় অতুলনীয়। আজ অবধি দারি, ফারসি ভাষার একটা উপভাষা, আফগানিস্তানের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা এবং দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন।

৩৩১ আকামেনীয় সম্রাট তৃতীয় দারিউস ম্যাকিদোনিয়ার সেকান্দার শার কাছে পরাজিত হলেন। ব্যাকট্রিয়ার রাজকন্যা রোকসানাকে বিয়ে করেন সেকান্দার শা। আফগানিস্তানে হেলেনীয় সংস্কৃতির বিস্তার।

৩২৮ হেরাত ও কান্দাহার* জিতে নিলেন সেকান্দার শা।
* কান্দাহার নামের উৎস সম্পর্কে একাধিক মত আছে। অনেকের মতে, কান্দাহার শব্দটি এসেছে গান্ধার থেকে। আবার অনেকের মতে, ম্যাকিদোনিয়ার সেকান্দার শার ফারসি নাম ইসকান্দার থেকে কান্দাহার শব্দটি এসেছে।

৩২০-১৮০ এ সময় গান্ধারা অঞ্চল শাসন করছেন মৌর্য সম্রাটরা।

৩০৩ দক্ষিণ আফগানিস্তানে এক যুদ্ধে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাছে হেরে যান প্রাচ্যে সেকান্দার শার এক সেনাপতি সেলুকাস, প্রথম নিকাটোর। তবে ব্যাকট্রিয়া রাজ্যটি দখলে রাখতে সমর্থ হন। উভয়ের মধ্যে একটা শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়, চন্দ্রগুপ্তের কাছ থেকে পাওয়া ৫০০ হাতির বিনিময়ে ভারতবর্ষের ওপর নিজের দাবি ছেড়ে দেন সেলুকাস, প্রথম নিকাটোর।

২৫৫ আফগানিস্তানকে বৌদ্ধধর্মের সাথে পরিচিত করিয়ে দিলেন সম্রাট অশোক মৌর্য।

২৫০ আফগানিস্তানে সেলুসীয়দের বিরুদ্ধে গ্রেকো-ব্যাকট্রীয় রাজ্যের উত্থান।

২৪৭ পার্থীয় নামে একটি যাযাবর গোষ্ঠীর উত্থানের কাল।

২১২-২০৫ গ্রেকো-ব্যাকট্রীয় ও পার্থীয়দের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে জিতলেন আফগানিস্তানের সেলুসীয় রাজা তৃতীয় অ্যান্টিওকাস।

১৮৬ গান্ধারা অঞ্চলে গ্রেকো-ব্যাকট্রীয় রাজা দিমিত্রিয়াসের বিজয় লাভ, অত্র অঞ্চলে গ্রিক শাসনের সূচনা ঘটল।

১৮০-৮০ এ সময় গান্ধারা অঞ্চল শাসন করছেন ইন্দো-গ্রিক রাজারা।

১৬৪-৫৫ প্রথম মিথ্রাদেতেসের অধীনে পার্থীয় সাম্রাজ্যের বিস্তার লাভ, এতে দুর্বল হয়ে পড়ল গ্রেকো-ব্যাকট্রীয় রাজ্য।

১৪০ আজকের আফগানিস্তানে এসময় দলে দলে ঢুকে পড়ছে সিথীয় আর কুশানদের মত যাযাবর গোষ্ঠীগুলো।

১২৫ সিথীয় আর কুশানদের আক্রমণে গ্রেকো-ব্যাকট্রীয় রাজ্যের পতন।* সিথীয়রা যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিল, তাই আজকের পশতুনিস্তান। অনেকেই মনে করেন, আজকের পশতুনরা এদের উত্তরসূরি।
* আফগানিস্তান থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় গ্রিক ভাষা। তবে উত্তর-পূর্ব কাবুলের নূরিস্তানের বিরান উপত্যকায় এখনো কিছু সোনালি চুল ও নীল চোখের মানুষের দেখা পাওয়া যায়। অনেকের মতে, এদের শরীরে গ্রিক রক্ত আছে।

৮০ পূর্বসাল-৭৫ সাল এ সময় গান্ধারা অঞ্চল শাসন করছে্ন সিথীয়-পার্থীয় রাজারা।

সাল

৭৫-৪৫০ এ সময় গান্ধারা অঞ্চল শাসন করছেন কুশান রাজারা। কালপর্বটি গান্ধারা সভ্যতার স্বর্ণযুগ বলে বিবেচিত হয়। এ সময় শিল্প ও স্থাপত্যকলার ব্যাপক সমৃদ্ধি ঘটে।

১০০ কাবুলের বাগরামসহ তিনটি রাজধানী থেকে এ-সময় অঞ্চলটি শাসন করছেন কুশান সম্রাট প্রথম কনিষ্ক। কনিষ্কের রাজত্বকালে সিল্ক রোড সফলতর হয়ে ওঠে। এই সিল্ক রোডে ভারত আর চীনের পণ্য ইওরোপে যেত, ইওরোপের পণ্য চীনে আসত।

২১৭-৭৫ পারস্যে মানির সময়কাল। তিনি প্রাচীন দুনিয়ায় মানিকিয়ান ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায়, তিনি আফগানিস্তানের বামিয়ানে সক্রিয় ছিলেন।

২৪১ বর্তমান আফগানিস্তানের অধিকাংশই ইরানের সাসানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল।

৪৭০ ভারতবর্ষে হেপথালীয় বা শ্বেত হুনদের অভিযানের সূচনা।

৫১৫-৩৩ এ সময় গান্ধারা অঞ্চল শাসন করছেন শ্বেত হুন রাজা মিহিরকুল।

৫৬৫ ইরানের প্রথম খসরু আর তাঁর তুর্কি মিত্রদের একটি যৌথ বাহিনী শ্বেত হুনদেরকে পরাস্ত করলেন।

৫৭০ হযরত মুহাম্মদের (সা.) জন্ম।

৬৪২-৫২ আরবদের আফগানিস্তান অভিযান।

৬৫০-৭০০ আরবদের হেরাত, বলখ, সিস্তান, কান্দাহার, কাবুল জয়।

৭০০-৮৭০ আরব প্রশাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকার শর্ত মেনে নিয়ে স্থানীয় শাসকরা কিছুকাল রাজত্ব করেন যাকে বলা হয় হিন্দুশাহি রাজত্ব। ৮৭০ পর্যন্ত এই হিন্দুশাহি রাজবংশ শাসন করেন। পূর্ব আফগানিস্তানের গান্ধারে আরো একশ বছর চলে এঁদের রাজত্ব।

৮১৯-৮৬৪ সামান খুদের রাজত্বকাল। বোখারা আর সমরখন্দে প্রতিষ্ঠিত হল সামানীয় রাজবংশ। এরা শিল্পসাহিত্য ও শিক্ষাদীক্ষায় অসামান্য অবদান রাখেন।

৮৫০-৮৭৩ খোরাসানে তাহির ফোশানজ ও তাঁর বংশধরদের শাসন।

৮৬৩ সিস্তানের ইয়াকুব বিন লেথ সাফারি তাহির ফোশানজের বংশধরদের কাছ থেকে হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নেন।

৮৭০ ইয়াকুব বিন লেথ সাফারি কাবুল জয় করে প্রতিষ্ঠা করেন সাফারিদ রাজবংশ। হিন্দুশাহি রাজবংশের পতন। সাফারিদ রাজবংশ ৬০০ বছর সিস্তান শাসন করে।

৯০০ সাফারিদদের অধীনস্ত সকল ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় সামানীয়রা, প্রায় ১০০ বছর ধরে শাসন করে

৯৬০ সামানীয় রাজত্বের বিরুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের তুর্কি-মঙ্গোল যাযাবরদের বিদ্রোহ।

৯৬১ সামানীয়দের তরফে শাসন করছেন আফগান-তুর্কি দাসযোদ্ধা আলপ্তগিন।

৯৭৭ আলপ্তগিনের মেয়ের জামাই ও তুর্কি দাসযোদ্ধা নাসিরুদ্দৌলা সবুক্তগিন তাঁর সামানীয় মনিবকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন।

৯৯৪ এ সময় আমু দরিয়ার দক্ষিণে খোরাসানের সব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছেন সবুক্তগিন।

৯৯৮ সবুক্তগিনের পুত্র মাহমুদ প্রতিষ্ঠা করলেন গজনভী বংশ। ভারতবর্ষে ইনি “গজনীর সুলতান মাহমুদ” নামে পরিচিতি। তাঁর রাজত্ব কুর্দিস্তান থেকে কাশ্মীর আর আমু দরিয়া থেকে গঙ্গা নদী পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ১০৩০ সালে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত শাসন করেন মাহমুদ, এ সময় মোট ১৭ বার ভারতবর্ষে আক্রমণ চালান। তাঁর বিরুদ্ধে মন্দির লুঠ করার অভিযোগ আছে, আছে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ, যা সমকালীন ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক বিতর্ক। তবে মাহমুদ জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিল্পসাহিত্যের সমঝদার ছিলেন। শাহনামার রচয়িতা কবি ফেরদৌসী থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক আল-বিরুনি অনেকেই তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন।

৯৯৯ সামানীয় রাজবংশের পতন।

১০২০ শাহনামার জন্য মশহুর কবি ফেরদৌসীর মৃত্যু।

১০৩০ গজনীর সুলতান মাহমুদের মৃত্যু।

১১২৩ উমর খৈয়ামের মৃত্যু।

১১৫০ আফগান সূফী গজনীর সানাইয়ের মৃত্যু।

১১৫১ আফগানিস্তানে শেষ হয়ে গেল গজনভী বংশের রাজত্ব। শুরু হল আফগান তুর্কিদের আরেকটি রাজবংশ ঘুরীদের রাজত্ব। ঘুরীরা গজনীতে গণহত্যা চালায়; শহরটির বিখ্যাত গ্রন্থাগার ও ভবনগুলো পুড়িয়ে দেন আলাউদ্দিন, ধারণ করেন জাহানসুজ বা দুনিয়াদগ্ধকারী উপাধি।

১২০০ খোরাসানীয় শাহ তুর্কিরা তাদের রাজধানী সমরখন্দ থেকে ইরান আর আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ল।

১২০২-১২৭৩ সূফী জালালুদ্দিন রুমির জীবনকাল।

১২১৫ আফগানিস্তানে ঘুরীদের রাজত্ব শেষ। খোরাসানীয় শাহ তুর্কিদের রাজত্ব শুরু। কিন্তু মঙ্গোল আক্রমণের কারণে এদের রাজত্বকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

১২১৯ ২ লক্ষ মঙ্গোল ঘোড়সওয়ার খোরাসানীয় অঞ্চলে ঢোকে।

১২২১-৮২ চেঙ্গিজ খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলদের আফগানিস্তান জয়।*
* চেঙ্গিজ খানের জন্মগত নাম তেমুজিন। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের এই প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া চরিত্রগুলোর একটি। তিনি একদিকে যেমন মঙ্গোলদেরকে একটি সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছেন, অন্যদিকে যেখানেই গেছেন স্থানীয়দের ওপর চালিয়েছেন নজিরবিহীন নৃশংসতা।

মঙ্গোলরা আফগানিস্তানে এক ভয়ানক ধবংসযজ্ঞ চালায়। ধবংস করে ফেলে বহু শহর ও গ্রাম। ইসলামি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রগুলো মঙ্গোলদের কারণে মর্যাদা হারায়। বিশ্ব সভ্যতা থেকে দূরে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। পশ্চিম আফগানিস্তান চলে যায় ইরান আর ইরাকের ইল-খানাতের দখলে। শাসিত হতে থাকে তাজিক কার্ট রাজবংশ দ্বারা, যারা ১২৩২ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে। আফগানিস্তানের বাকি অংশ চাগতাই খানাতের দখলে থাকে।

১৩৬৪-১৫০৬ চেঙ্গিজ খানের বংশধর আমির তৈমুরের আফগানিস্তান জয়।* তিমুরীয় বংশের রাজত্বকাল। এই সময়কালটি আফগানিস্তানের ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বিবেচিত হয়ে থাকে, যা তিমুরীয় রেনেসাঁ নামে অভিহিত।**
* উজবেকিস্তানের জাতীয় বীর। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল চেঙ্গিজের সাম্রাজ্যকে পুনরুদ্ধার করা। সেই উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছিল বলা কঠিন, তবে নৃশংসতায় তিনি চেঙ্গিজ খানকেও ছাড়িয়ে গেছেন, ছিলেন এতটাই রক্তপিপাসু।
** এই রেনেসাঁর প্রাণপুরুষ যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কবি আবদুর রহমান জামি, চিত্রশিল্পী বেহজাদ, ও ঐতিহাসিক মিশকওয়ান্দ।

১৪০৫ তৈমুরপুত্র শাহরুখ হেরাতে তাঁর রাজধানী স্থাপিত করেন।

১৪২০ সুলতান আলী মির্জা কর্তৃক নির্মিত হয় মাজার-ই-শরিফের বিখ্যাত নীল মসজিদ।

১৪৫১ দক্ষিণপূর্ব আফগানিস্তানের গিলজাই পশতুনদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষের দিল্লি সালতানাতের লোদি বংশ।

১৪৭০-১৫০৬ হুসাইন বায়কারা’র রাজত্বকাল। বায়কারা ছিলেন আফগানিস্তানে তিমুরীয় বংশের শেষ শাসক। তাঁর শাসনামলে জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিল্পসাহিত্য উৎকর্ষ লাভ করে।

১৫০৪ মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিজ খান আর বাপের দিক থেকে আমির তৈমুরের বংশধর ১৯-বছর-বয়সী তুর্কি যুবক জাহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবুর কাবুল জয় করেন।

১৫০৬ আফগানিস্তানের হেরাত দখল করে নিল ইরানের সাফাভিরা।

১৫২৬ দিল্লিতে গিলজাই পশতুন লোদিদেরকে পরাস্ত করার মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন বাবুর।

১৫২৬-১৭৪৭ কাবুল আর পশতুনিস্তান শাসন করছে মুঘল সাম্রাজ্য। সমরখন্দের উজবেকরা শাসন করছে বলখ। ইরানের সাফাভি রাজবংশ শাসন করছে পশ্চিম আফগানিস্তান।

১৫৩০ উত্তর ভারতের পাশাপাশি আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল বাবুরের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এ- বছরই আগ্রায় মৃত্যুবরণ করেন জাহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবুর। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে কাবুলে কবর দেয়া হয়।*
* জায়গাটি বাগ-ই-বাবুর, বা ‘বাবুরের বাগিচা’, নামে পরিচিত।

১৬১৩-৯০ কবি, দার্শনিক, যোদ্ধা খুশাল খান খট্টকের সময়কাল। তিনি পশতুনদের মধ্যে মুঘলবিরোধী আবেগ তৈরি করেন। ঠিক ইওরোপীয় অর্থে জাতীয়তাবাদী না হলেও এক ধরণের স্বাধিকারবোধ যে জন্ম নিচ্ছিল আফগানদের মধ্যে, খট্টকের রচনাবলিতে তার প্রমাণ মেলে।

১৭০৯ কান্দাহার দখল করে নিলেন মীর ওয়াইস খান।

১৭২২ মীর ওয়াইস খানের পুত্র মাহমুদের নেতৃত্বে আফগানরা ইরান আক্রমণ করে সাফাভিদেরকে উৎখাত করল।

১৭৩৬ ইরান থেকে আফগানদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে শাহ হিশাবে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন নাদির।

১৭৪৭ আততায়ীদের হাতে খুন হলেন ইরানের নাদির শাহ। কান্দাহারে আবদালিদের নয়টি সম্প্রদায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত। নয় দিন ধরে চলল আলোচনা আর বাকবিতণ্ডা। শেষে সাদোজাইদের আহমাদ শাহ আবদালি রাজা নির্বাচিত হলেন। আহমাদ শাহ দুররানি নাম নিয়ে ক্ষমতায় বসলেন। কান্দাহারকে রাজধানী বানালেন। প্রতিষ্ঠা করলেন দুররানি রাজবংশ।

১৭৪৭-৭৩ “আফগানিস্তানের জনক” খ্যাত আহমাদ শাহ দুররানির রাজত্বকাল।

১৭৫৭ আহমাদ শাহ দুররানি দিল্লি দখল করলেন। তবে তিনি মুঘল সম্রাটকে সিংহাসনচ্যুত করেন নি। মুঘল সম্রাটকে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র তৈমুর শাহের নজরদারিতে রেখে গেলেন।

১৭৬১ মারাঠা আর শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন আহমাদ শাহ দুররানি। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আফগানদেরকে কাছে পরাজিত হয় মারাঠারা।

১৭৬১-৬৯ আফগান-শিখ যুদ্ধ। এ-সময় আফগানরা কয়েক হাজার শিখকে হত্যা করে, ধবংস করে অসংখ্য শিখ উপাসনালয়। কিন্তু এতকিছুর পরও তারা পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়।

১৭৭২ আহমাদ শাহ দুররানির মৃত্যু।

১৭৭৩-১৭৯৩ আহমাদ শাহ দুররানির ছেলে তৈমুর শাহ দুররানির রাজত্বকাল।

১৭৭৫ তৈমুর শাহ দুররানির ইচ্ছায় আফগানিস্তানের রাজধানী কান্দাহার থেকে কাবুলে সরিয়ে আনা হল।

১৭৮১ দুরদানিদের বিরুদ্ধে দিকে দিকে বিদ্রোহ, ফলে পশ্চিমে খোরাসান আর দক্ষিণে সিন্ধুর ওপর দখল হারান তৈমুর শাহ দুররানি।

১৭৯৩ তৈমুর শাহ দুররানির মৃত্যু।

১৭৯৩-১৮০১ জামান শাহ দুররানির রাজত্বকাল।

১৭৯৭-৯৮ শিখদের বিরুদ্ধে জামান শাহ দুররানির দুটি অভিযান ব্যর্থ হয়ে গেল। লাহোরে নিজেরই রাজ্যপাল রঞ্জিৎ সিংয়ের কাছে পরাজিত হলেন তিনি। সাদোজাইদের পতন সময়ের ব্যাপার।

১৮০১-১৮০৩ জামান শাহের ভাই মাহমুদ শাহ দুররানির রাজত্বকাল।

১৮০৩-০৯ শাহ সুজার রাজত্বকাল।

১৮০৯-১৮ পুনরায় মসনদে আসীন হলেন শাহ মাহমুদ দুরদানি, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তিনি।

১৮১৯-২৬ আফগানিস্তানে এসময় সাদোজাই আর বারাকজাই গোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে।

১৮৩৪-৩৯ কাবুল জয় করলেন দোস্ত মোহাম্মদ খান, পরের বছরগুলো ছিল তাঁর শাসন পোক্ত করার বছর।

১৮৩৫ প্রথম রুশ দূত জান উইতকিয়েভিৎজ কাবুল পৌঁছলেন

১৮৩৯-৪২ প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ। ব্রিটিশরা শাহ সুজাকে আফগানিস্তানের সিংহাসনে বসায়, ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে আফগানরা তাঁকে হত্যা করেন। কাবুল থেকে ফেরার পথে স্বাধীনতাকামী আফগানদের হাতে কচুকাটা হয় ব্রিটিশ ও ভারতীয় বাহিনী।

১৮৪৩-৪৬ আকবর খানের রাজত্বকাল।

১৮৪৬-৬৩ একদা নির্বাসিত দোস্ত মোহাম্মদ খান গদি দখল করতে আফগানিস্তানে ফিরে আসলেন।

১৮৬৩-৬৮ দোস্ত মোহাম্মদের মৃত্যু। ক্ষমতা লাভ করলেন তাঁর পুত্র শের আলি।

১৮৭২ ব্রিটিশ আর রুশরা যৌথভাবে আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করল। পুরো উনবিংশ শতাব্দী জুড়েই আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাজ্য আর রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ববিবাদ লেগেই ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এটি গ্রেট গেম নামে পরিচিত।

১৮৭৮-৮০ দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ।

১৮৮১ ব্রিটিশরা আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতা আবদুর রহমান খানের হাতে তুলে দিতে রাজি হল, তবে একটি চুক্তির মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার ক্ষমতা নিজেদের হাতে রেখে দিল। আবদুর রহমান খানের রাজত্ব শুরু হল। তাঁর রাজত্বকালে রাষ্ট্রটিকে সুসংহত করা হয় এবং সেনাবাহিনীকে জোরদার করা হয়।

১৮৮৫ ব্রিটিশরা হেরাতের মুসাল্লা কমপ্লেক্সকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিল, উদ্দেশ্য ছিল সম্ভাব্য রুশ হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য একটা ফায়ারিং ফিল্ড তৈরি করা।

১৮৮৮ ইরানের সাথে আফগানিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারিত হল।

১৮৯৩ ব্রিটিশ ভারতের ফরেন সেক্রেটারি মর্তিমার দুরান্ত কর্তৃক আফগানিস্তান আর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মাঝখানে আঁকা হল দুরান্দ রেখা। এই রেখা আঁকা হয়েছিল পশতুনদের গোত্রীয় জমিজমার ওপর দিয়ে। এই রেখা আঁকার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়।

১৯০১-২০০০ এই শতাব্দীতে আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা বিশবার বদলেছে।

১৯০১ আফগানিস্তানে আবদুর রহমান খানের রাজত্ব শেষ, শুরু হল হাবিবুল্লা খানের রাজত্ব।

১৯০৩ এ বছর আফগানিস্তানের প্রথম মাধ্যমিক ইশকুল চালু হয়।

১৯০৪ মাটির ওপর ইরান-আফগানিস্তান সীমান্ত চিহ্নিত করা হল।

১৯১৪-১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।*
* আফগানিস্তান নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করে।

১৯১৯ আততায়ীদের হাতে খুন হলেন হাবিবুল্লা খান। ক্ষমতায় আসলেন তাঁর পুত্র আমানুল্লা খান। তৃতীয় ও শেষ ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ। এর ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রাওয়ালপিণ্ডি চুক্তির মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিশাবে আত্মপ্রকাশ করে আফগানিস্তান।

আগস্ট ১৯ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।

স্যার হ্যালফোর্ড ম্যাকিনডার, ডেমোক্রেটিক আইডিয়াজ অ্যান্ড রিয়েলিটি

১৯২১ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মৈত্রীচুক্তি সাক্ষর করে আফগানিস্তান। এ বছর বাদাখশানে আফগানিস্তানের ইতিহাসের সবচে শক্তিশালী ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয় এ বছর। মাত্রা ছিল ৮.১।

১৯২৩ আফগানিস্তানের প্রথম সংবিধান ঘোষণা করলেন আমানুল্লা খান।

১৯২৬ সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আফগানিস্তানের মধ্যে সাক্ষরিত হল অনাগ্রাসন চুক্তি। আফগানিস্তানে একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করলেন আমির আমানুল্লা। তিনি ডিক্রি জারি করলেন, আফগান পুরুষদের ইওরোপীয় পোষাক পরা উচিত, আর নারীদের বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা উচিত।  তাঁর সরকার পর্দা ও চাদরি বিলুপ্ত করে। দেশটির রাজধানী কাবুলে সহশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। আমানুল্লার এই আধুনিকীকরণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন ছিল। আফগান মোল্লারা এসব সামাজিক সংস্কারের বিরোধী ছিলেন।

১৯২৬-২৯ স্বাধীন আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।

১৯২৭ আফগানিস্তানে প্রথমবারের মত চালু হল অভিন্ন মুদ্রা আফগানি

১৯২৮ শিনওয়ারি পশতুনরা জালালাবাদের নিয়ন্ত্রণ নিল। বাচ্চা-ই সাকো নামে পরিচিত তাজিক নেতা হাবিবুল্লাহ গাজী তাঁর অনুসারীদেরকে কাবুলের উত্তরে জড়ো করলেন।

ডিসেম্বর বাচ্চা-ই সাকোর বাহিনী কাবুলে উপকণ্ঠে হামলা চালাল।

১৯২৯ জানুয়ারি আমির আমানুল্লা তাঁর বড় ভাই ইনায়েতুল্লার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করলেন এবং কান্দাহার ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।  ইনায়েতুল্লা মসনদে বসার মাত্র তিনদিন পর রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করলেন বাচ্চা-ই সাকো, নিজেকে আমির ঘোষণা করলেন, এবং আমানুল্লার নেয়া আধুনিকীকরণের পদক্ষেপগুলো রদ করলেন। সোভিয়েতদের ধারণা ছিল, বাচ্চা-ই সাকোর পেছনে ব্রিটিশদের মদত আছে, তাই তারা তাকে সরিয়ে আমানুল্লাকে পুনরায় আফগানিস্তানের গদিতে বসানোর চেষ্টা করে; তবে তাঁদের এই চেষ্টা সফল হয় নি।

অক্টোবর ক্ষমতাবান মুসাহিবান পরিবার কাবুলের দখল নিল।

নভেম্বর এই পরিবারের নাদির শাহের রাজ্যাভিষেক ঘটে।

১৯৩১ ১৯২৩ সালের আদি সংবিধানের ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন নাদির শাহ। সুন্নী ইসলামের হানাফি মাজহাব রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। আফগানিস্তানের জাতীয় ব্যাংক ব্যাংক-ই-মিল্লি ও কাবুল যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হল।

১৯৩৩ নভেম্বর ৮ এক র‍্যাডিকাল হাজারা ছাত্রের হাতে খুন হয়ে যান মোহাম্মদ নাদির শাহ।* তাঁর ১৯-বছর-বয়সী পুত্র জহির শাহের রাজত্ব শুরু। পরবর্তী ৪০ বছর শাসন করবেন জহির শাহ।
* হাজারারা আফগানিস্তানের শিয়া মতাবলম্বী একটি সংখ্যালঘু জাতি।

১৯৩৪ লীগ অফ নেশনসে যোগ দিল আফগানিস্তান। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে।

১৯৩৬ আফগানিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে একটা বাণিজ্য চুক্তি করল আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করল একটা মৈত্রীচুক্তি।

১৯৩৮ দা আফগানিস্তান ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত।

১৯৩৯-৪৪ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।*
* এই যুদ্ধেও নিরপেক্ষ থাকে আফগানিস্তান।

১৯৪৬ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করল আফগানিস্তান। প্রধানমন্ত্রী হিশাবে মোহাম্মদ হাশিম খানের স্থলাভিষিক্ত হলেন শাহ মাহমুদ। প্রবর্তন করলেন একগুচ্ছ উদারবাদী সংস্কার। প্রকাশ পেতে শুরু করল বিরোধীদলীয় পত্রপত্রিকা। গঠিত হল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন। তাঁরা অধিকতর সংস্কারের দাবি জানালেন। ১৯৫১-৫২ সালে এই স্বল্পস্থায়ী উদারবাদী পর্যায়ের অবসান ঘটে।

১৯৪৬-৫৩ আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন সর্দার শাহ মাহমুদ খান।  তাঁর শাসনামলে আফগানরা স্বাধীন পশতুনিস্তানের ধারণা সামনে আনে, লক্ষ্য ছিল দুরান্দ রেখার দুইদিকে থাকা পশতুনদের ঐক্যবদ্ধ করা।  সর্দার শাহ মাহমুদ খান পররাষ্ট্রনীতিতে পশ্চিমঘেঁষা ছিলেন।

১৯৪৭ নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তান তার আফগান সীমান্ত বন্ধ করে দিল।

১৯৫০ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তান একটা চুক্তি করে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক রাশিয়া দেবে তেল, আর আফগানিস্তান দেবে ভেড়ার পশম আর তুলা। সোভিয়েতরা কাবুলে একটা বাণিজ্য সংক্রান্ত অফিস খোলে।

১৯৫৩ আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন সর্দার মুহাম্মদ দাউদ খান। দাউদ মাহমুদের পশ্চিমঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে স্নায়ুযুদ্ধের ফায়দা নেয়া।

চেকোস্লোভাকিয়ার সাথে ৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি সাক্ষর করল আফগানিস্তান।

১৯৫৪-৫৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে অর্থসহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে দিল। একইসাথে ওয়াশিংটন ডি.সি.’র তরফে কাবুলকে জানান হল, পশতুনিস্তান নিয়ে ইসলামাবাদের সাথে বিবাদ মেটানোর আগ পর্যন্ত কোনপ্রকার অস্ত্র সাহায্য দেয়া হবে না। ১৯৫৫ সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ কাবুল সফর করেন, এ সময় তিনি পশতুনিস্তানের ওপর আফগানদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

১৯৫৬ যুক্তরাষ্ট্র কান্দাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করল।

১৯৫৮ কান্দাহারের নিকটে উন্মোচন করা হল অশোকের ফরমান, যে স্তম্ভের গায়ে গ্রিক ও আরামাইক ভাষায় খোদাইকৃত লেখা চোখে পড়ে।

১৯৫৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনওয়ার আফগানিস্তান সফর করেন। এ-বছর ছিল আফগানিস্তানের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ দাউদ খান রাজপরিবারের মেয়েদেরকে ও গুরুত্বপূর্ণ নারী সরকারি কর্মকর্তাদেরকে পর্দা ছাড়া জনসমক্ষে আসার অনুরোধ জানান। আফগানিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে এই ঘটনায় চমকে ওঠে এবং মোল্লারা এর তীব্র নিন্দা জানান। এ সময় আফগানিস্তানে নারী অধিকারের কিছুটা অগ্রগতি ঘটে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা পড়াশোনা করার সুযোগ পান। অনেকে আরিয়ানা এয়ারওয়েজ’‘য়ের বিমানবালা হওয়ার সুযোগ পান।

১৯৬১ পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল আফগানিস্তান। পশতুনিস্তান ইস্যু নিয়ে। দাউদ পাকিস্তানে ভূখণ্ডে আফগান সেনা ও গোত্রীয় যোদ্ধাদের একটা সম্মিলিত বাহিনী পাঠালেন। আইয়ুব খান আফগানিস্তানে পাকিস্তানি দূতাবাস বন্ধ করে দিলেন। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী কোনার প্রদেশে বোমাবর্ষণ করল। বন্ধ হয়ে গেল দুই দেশের সীমান্ত চলাচল। আঠারো মাস ধরে চলল এই সীমান্ত সংঘাত, করাচির ওপর বাণিজ্যের জন্য নির্ভরশীল হওয়ায় আফগানিস্তানেরই বেশি ক্ষতি হল।

১৯৬৩ ইরান সরকার আফগান আর পাকিস্তানি প্রতিনিধিদেরকে তেহরানে নিমন্ত্রণ জানাল এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল। আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে দাউদ খানকে বলপূর্বক সরিয়ে দেয়া হল, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন মোহাম্মদ ইউসূফ। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ৩২.৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি সাক্ষর করল আফগানিস্তান।

১৯৬৪ উত্তর আর দক্ষিণ আফগানিস্তানকে যুক্ত করা সালাং টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হল।  এটি একটি সোভিয়েত-আফগান যৌথ প্রকল্প ছিল।  আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিলেন মুহাম্মদ জহির শাহ, নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেন, যা গ্রহণ করে নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে উত্তরাধিকারমূলক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল।

১৯৬৫ অক্টোবর প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর আফগান সেনারা গুলি চালালে তাতে ৩ ছাত্রের মৃত্যু হয়। ছাত্র আন্দোলনে উৎখাত হলেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ ইউসূফ। নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মোহাম্মদ হাশিম মাইওয়ান্দওয়াল।

নূর মোহাম্মদ তারাকি প্রতিষ্ঠা করলেন আফগান কমিউনিস্ট পার্টি: পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (পিডিপিএ)।*
* এই পার্টি এর জন্মলগ্ন থেকেই বিভক্ত ছিল: একদিকে ছিল পারছাম,আর অন্যদিকে খালকপারছাম ছিল শহুরে আফগানদের পার্টি, যা দেশটির বিভিন্ন জাতির কাছ থেকেও সমর্থন পেত। অপরদিকে খালক ছিল গ্রাম অভিমুখী, এবং এরা মূলত দেশটির সবচে শক্তিশালী জাতি পশতুনদের সমর্থনের ওপরই নির্ভর করত। 

১৯৬৭ মাইওয়ান্দওয়াল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন নূর আহমেদ এতেমাদি।

১৯৬৮ আফগানিস্তানে ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলন দেখা দিল।

১৯৬৯-৭২ ১৯৬৯ সালের বসন্তকালে ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে গুলি চালিয়ে কয়েকজন ছাত্রকে খুন করল আফগান পুলিশ। ব্যাপক দুর্ভিক্ষে আফগানিস্তানে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু। দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন মূসা শফিক।

১৯৭৩ জুলাই ১৭ এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন দাউদ।* নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করলেন। আফগানিস্তানে রাজতন্ত্রের অবসান। মুহাম্মদ জহির শাহ এ-সময় ইতালিতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তাঁকে নির্বাসিত করা হল। এ বছর নাগাদ আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১.৫ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল সেই তুলনায় সামান্য, মাত্র ৪২৫ মিলিয়ন ডলার।
* মস্কো এই ক্যুদেতার ব্যাপারে আগে থেকেই জানত, তারা দাউদের ক্ষমতা দখলকে স্বাগত জানায়।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার জন্য আফগান সরকার তিন বছরের জন্য পশম বিক্রি নিষিদ্ধ করল।

১৯৭৪ মোহাম্মদ দাউদ খান এ-বছর মস্কো সফর করেন। কিন্তু মস্কোর পুতুল হওয়ার ইচ্ছা ছিল না দাউদের। তাই তিনি ইরানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের কথা ভাবলেন। ইরানের শাহ দাউদকে দশ বছর মেয়াদে ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যিক নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তান ও ইরানকে একীভূত করার প্রস্তাবও দেন।

১৯৭৬ ইরানের মধ্যস্ততায় আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন। মোহাম্মদ দাউদ খান আর জুলফিকার আলী ভুট্টো একে অপরের দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন। এ-বছর ৪.৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়।

১৯৭৭ আফগানিস্তানে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হল।  আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হল, দাউদ খান হলেন প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট।  দাউদের দল ন্যাশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হল। আফগানিস্তান কার্যত একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হল। মীনা কেশওয়ার কামাল প্রতিষ্ঠা করলেন রেভল্যুশনারি অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য উইমেন অফ আফগানিস্তান (রাওয়া)।

১৯৭৮ এপ্রিল ১৭ পিডিপিএ’র এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মীর আকবর খাইবার আততায়িত হন। কমিউনিস্টরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দাউদ আর সিআইএকে দায়ী করে; কাবুলে এক বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করে তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় নূর মোহাম্মদ তারাকি আর বারবাক কামালকে গ্রেপ্তার করেন দাউদ।
এপ্রিল ২৭ আফগান সেনাবাহিনীতে পিডিপিএর সমর্থকরা কাবুলে এক ক্যুদেতার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ খানের সরকারকে উৎখাত করল।* কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান। নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন নূর মোহাম্মদ তারাকি।**
* এই ক্যুদেতার সাথে মস্কোর সরাসরি সম্পর্ক ছিল কিনা ঐতিহাসিকদের মধ্যে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন ছিল, অনেকে মনে করেন ছিল না। তবে এটুকু বলা চলে, ক্যুদেতা মস্কোর পক্ষে গেছিল।
** এটি সাউর, অর্থাৎ এপ্রিল, বিপ্লব নামে পরিচিত। এই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল পার্টির খালক ফ্যাকশন। মস্কো এদেরকে একটা ব্যাপকভিত্তিক সরকার গঠনের পরামর্শ দেয়, যাতে অকমিউনিস্টদেরকেও জায়গা দেয়া হবে। কিন্তু এরা মস্কোর এই পরামর্শ অগ্রাহ্য করে। পার্টির পারছাম ফ্যাকশনের ওপর দমনপীড়ন চালান হয়। খালক ফ্যাকশনের নেতারা ছিলেন ভয়ানক রকমের মতান্ধ। যেদিকে তাকাতেন সেদিকেই শুধু শত্রু দেখতে পেতেন।

প্রতিষ্ঠা করা হল গোপন পুলিশ আগসা (দা আফগানিস্তান দে গাতো দে সাতালো আদারা)। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে নতুন করে মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষর। দেশটির রাজধানী কাবুলের জনসংখ্যা এই সময় ৬ লাখ।

১৯৭৯ মার্চ হেরাতে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেখা দিল।

সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী হাফিজুল্লা আমিনের হাতে গ্রেপ্তার হলেন প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ তাকারি।

অক্টোবর হাফিজুল্লা আমিনের হাতে খুন হলেন তারাকি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এই হত্যাকাণ্ডকে ভালোভাবে নেয়নি।

ডিসেম্বর ১২ লিওনিদ ব্রেজনেভ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্যরা আফগানিস্তানে একটি বিশেষ অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্তকে বৈধতা প্রদান করা দলিলে সই করলেন।
ডিসেম্বর ২৪ বাগরাম বিমান ঘাঁটির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক সেনাকে কাবুলে নামাল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ডিসেম্বর ২৭ সোভিয়েতদের এলিট বাহিনী স্পেতসনাজ কমাণ্ডো বাহিনী রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ ঘিরে ফেলে এবং হাফিজুল্লা আমিনকে হত্যা করে।

তারা বারবাক কামালকে নতুন প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করল।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মীনা কেশওয়ার কামালের নেতৃত্বে প্রচারাভিযান চালাতে শুরু করল রাওয়া।

১৯৮০ বারবাক কারমাল সমস্ত বন্দীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। সরকারি তরফে দাবি করা হয় ৮,০০০ বন্দীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। বিরোধীদের হিসেবে সংখ্যাটা ছিল এরা অর্ধেক: ৩,০০০-৪০০০য়ের মত।

বারবাক কারমাল ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার শুরু করেন। তিনি দাবি করেন, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সশস্ত্র আক্রমণ আসলে “আল্লাহর ইচ্ছায়” হয়েছে। সংবিধানে ইসলামকে শ্রেষ্ঠ ধর্মের স্বীকৃতি দেয়া হল, প্রতিষ্ঠা করা হল ডিপার্টমেন্ট অফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স।

জানুয়ারি আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের নিন্দা জানাল জাতিসংঘ।
জানুয়ারি ২৯ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সোভিয়েত আগ্রাসন বিরোধী মুজাহিদিনকে পাকিস্তান সরকারের মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহ করার একটা সিআইএ কভার্ট অপারেশন অনুমোদন করেন।* কংগ্রেসকে এই কভার্ট অপারেশনের ব্যাপারে জানান হয়। এই কর্মসূচির জন্য কংগ্রেস বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ দেয়া অনুমোদন করে।
* প্রেসিডেন্ট কার্টারের চোখে এই মুজাহিদিনরা “মুক্তিযোদ্ধা” ছিলেন। পরে এদের একাংশ বন্দুকের নল রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঘুরিয়ে দিলে এরা ‘সন্ত্রাসবাদীতে’ পরিণত হন। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন, (Eqbal 2001)।

ফেব্রুয়ারি কাবুলে ব্যাপক প্রতিবাদ দেখা দিল। সোভিয়েতরা তাদের বৃহৎ অপারেশনগুলোর সূচনা ঘটাল।

সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আগ্রাসনের প্রতিবাদে এ বছরের মস্কো অলিম্পিক বয়কট করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আফিম এ সময় আফগানিস্তানের প্রধান শস্য হয়ে ওঠে। আফিম পরিশোধন হয়ে ওঠে দেশটির প্রধান শিল্প। কারণ লাভজনক রপ্তানিবাণিজ্য।

১৯৮১ রাওয়া কর্তৃক প্রকাশিত হতে শুরু করল দ্বিভাষিক (ফারসি-পশতু) পত্রিকা পায়াম-ই-জান (নারীর বার্তা)।

১৯৮২ এই বছরের মধ্যে প্রায় ৪০,০০০ শিশু কারমাল সরকারের তরুণ অভিযাত্রিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এই কর্মসূচি ছিল ১০ বছর বয়সীদের জন্য। এই শিশুদেরকে গোয়েন্দা হিশাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

১৯৮৩ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান মুজাহিদিন নেতাদেরকে হোয়াইট হাউজে স্বাগত জানান, তাঁদের দেশটির প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের সাথে তুলনা করেন।

১৯৮৪-৮৭ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই) এই সময়কালে প্রায় ৮০,০০০ মুজাহিদিনকে প্রশিক্ষণ দেয়। আফ-পাক সীমান্তে আহত মুজাহিদিন যোদ্ধাদেরকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এসবই ঘটেছিল জিয়াউল হকের ইচ্ছায়।*
* পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরতন্ত্রী। ১৯৭৭ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন। দু’বছর পর এপ্রিলে ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলান। দেশটির গণতন্ত্র ধবংস করায় “অনন্যসাধারণ” ভূমিকা রেখেছেন। ক্ষমতার স্বার্থে ধর্মের ধোঁয়া তুলে জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন। পাকিস্তানি প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আফগান মুজাহিদিনদের পেছনে গোপন মদত ছিল জিয়ার।

১৯৮৪ এই বছরের মধ্যে ফিবছর প্রায় ৪,০০০ তরুণ শিক্ষার্থী আর ৭-১০ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থী অধ্যয়নের জন্য আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে যাচ্ছে।

১৯৮৫ সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়তে গঠিত হল ইসলামিক ইউনিয়ন অফ আফগান মুজাহিদিন (আইইউএএম)। সোভিয়েত ইউনিয়নে ক্ষমতায় এলেন মিখাইল গর্বাচেভ।

অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্যরা এই ব্যাপারে সম্মত হলেন যে আঠারো মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

আফগান গার্ল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার জুন সংখ্যার প্রচ্ছদে শরবত গুল নামের এক আফগান নারীশিশুর ছবি ছাপা হল। পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের জন্য এক ইশকুলে আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি এই আইকনিক ছবিটি তুলেছিলেন। একই পত্রিকার ২০০২ সালের এপ্রিল সংখ্যায় শরবত গুলের জীবনী ছাপা হয়, যেখানে দাবি করা হয় তার বাবা-মা আফগানিস্তানে এক বোমা হামলায় মারা গেছেন। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে আলোকচিত্রী টনি নর্থআপ শরবত গুলকে নিয়ে ইউটিউবে একটা ভিডিও পোস্ট করেন। জানা যায়, গুলের মা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে মারা গেছেন, এবং পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর বাবা জীবিত ছিলেন। ম্যাককারি দাবি করেছিলেন, ছবিতে গুলের চোখে যে-ভয় দেখা যাচ্ছিল, সেটা হচ্ছে যুদ্ধের ভয়। কিন্তু পরবর্তীতে গুল জানান, তাঁর ভয়টা যুদ্ধ নিয়ে ছিল না, ছিল বেগানা পুরুষ আলোকচিত্রীকে চেহারা দেখান নিয়ে।

১৯৮৬ সিআইএ আফগান মুজাহিদিনকে স্টিঞ্জার এন্টিএয়ারক্রাফট মিসাইল সরবরাহ করল। এই মিসাইল সোভিয়েতদের হেলিকপ্টার গানশিপ ভূপাতিত করার কাজে আসে।

ফেব্রুয়ারি পার্টি কংগ্রেসে গর্বাচেভ জানালেন, অচিরেই আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে যাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী। আফগানিস্তান থেকে ৮,০০০ সৈন্য প্রত্যাহার করলেন গর্বাচেভ। পদত্যাগ করলেন প্রেসিডেন্ট বারবেক কারমাল।

মে আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ।

জোসেফ কলিন্স, দ্য সোভিয়েত ইনভ্যাশন অফ আফগানিস্তান

১৯৮৭ জানুয়ারি নাজিবুল্লাহ “জাতীয় পুনর্মিলন”য়ের ডাক দিলেন।

ফেব্রুয়ারি ৪ পাকিস্তানের কোয়েটায় আততায়ীদের হাতে খুন হলেন মীনা কেশওয়ার কামাল।*
* এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কারা দায়ী তা নিয়ে বিবাদ আছে। অনেকে মনে করেন, আফগানিস্তানের সোভিয়েত পুতুল সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা খেদমতে আয়েলাতে দৌলতির (খাড) এজেন্টরা মীনাকে খুন করেছিল। আবার অনেকের মতে, এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পশতুন মুজাহিদিন নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের লোকেরা।

ডিসেম্বর মিখাইল গর্বাচেভ আর রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা শুরু হল।

১৯৮৮ এপ্রিল ১৪ জেনেভায় আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হল। এই চুক্তি মোতাবেক, সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে তাঁর সব সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করল।

উবায়দুর রহমান খান নদভী, আফগানিস্তানে আমি আল্লাহকে দেখেছি

১৯৮৯ ফেব্রুয়ারি ১৫ শেষ সোভিয়েত সেনাটি আফগানিস্তান ছেড়ে গেলেন। এই সেনাটি ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল বরিস গ্রোমভ। আমু দরিয়ার ওপর অবস্থিত আফগানিস্তান আর উজবেকিস্তানকে সংযুক্ত করা সেতুর ওপর দিয়ে ছেলেকে নিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে যান তিনি। সোভিয়েত আগ্রাসনে ১০ লক্ষাধিক আফগান খুন হন। এই যুদ্ধে প্রাণ হারান ১৫,০০০ সোভিয়েত সৈন্য। ৬০ লক্ষ আফগান শরনার্থী হয়ে পাকিস্তান ও ইরানে আশ্রয় নেন।  দেশটির ২২,০০০ গ্রামের মধ্যে ১২,০০০ ধবংসপ্রাপ্ত হয়।

ইসলামাবাদে সিআইএর প্রধান সংস্থাটির সদরদপ্তরে একটি দুই শব্দের সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠান: “আমরা জিতেছি।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচে সফল এই কভার্ট অপারেশনে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। আফগানিস্তান “সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিয়েতনাম” বলে বিবেচিত হয়।

পাকিস্তানে নির্বাসিত আফগানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হল অন্তর্বর্তীকালীন আফগান সরকার। ওসামা বিন লাদেন প্রতিষ্ঠা করলেন আল কায়েদা। মুজাহিদিনরা সাত মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখলেন জালালাবাদ, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহরটা নিয়ে নিতে ব্যর্থ হলেন তারা।

১৯৯০ গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হিজবে ইসলামি কাবুলে ধবংসযজ্ঞ চালাল।

১৯৯২ সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ছেড়ে যাবার পরপরই নাজিবুল্লাহ’র সোভিয়েতপন্থী সরকার ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ল। নাজিবুল্লাহ কাবুলের জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। ১৯৯৬ সালে খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন তিনি। মুজাহিদিনদের কাবুল জয়। বোরহানুদ্দিন রাব্বানির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মুজাহিদিন সরকারসমেত প্রতিষ্ঠিত হল ইসলামি প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান। বিপুলসংখ্যক আফগানরা আবার পাকিস্তান আর ইরানে শরণার্থী হলেন। কাবুলে হামলা চালালেন মুজাহিদিন কমাণ্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার।

১৯৯২-৯৪ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী একদল সমরনায়ক দেশ চালাচ্ছেন। তাদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে কাবুলে ৫০,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হল। ধবংস হয়ে গেল রাজধানীর ৭০ শতাংশ ভবন। সমরনায়কে পরিণত হওয়া মুজাহিদিন নেতাদের অন্তঃর্কলহের জের ধরে কাবুল যাদুঘরে বোমা মারা হল। যাদুঘরের প্রধান কিউরেটর আর কর্মীরা ভবনের বেজমেন্টে যত বেশি সম্ভব নিদর্শন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালালেন। তারপরও মূল্যবান নিদর্শন লুট ঠেকান গেল না।

১৯৯৩ নিউ ইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ট্রাক বোমা হামলা চালায় আল কায়েদা।

১৯৯৪ উজবেক নেতা আবদুর রশিদ দোস্তুম রাব্বানি সরকারের সাথে পূর্বগঠিত জোট থেকে বেরিয়ে এসে পশতুন নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সাথে হাত মেলালেন। সোভিয়েত আগ্রাসনের কারণে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়া আফগানদের যে-শরণার্থী শিবিরগুলো তৈরি হয়, সেসব শরণার্থী শিবিরের মাদ্রাসাগুলো থেকে তৈরি হল তালেবান আন্দোলন। তালেবান তালেব’র বহুবচন, এর অর্থ মাদ্রাসা ছাত্র। আফ-পাক সীমান্তের মাদ্রাসা ছাত্ররাই প্রথম প্রজন্মের তালেবান। এদের নেতা মোল্লা ওমর মাদ্রাসা শিক্ষক ছিলেন। তালেবানরা দেশটির দক্ষিণে পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেন। কান্দাহার দখল করল তালেবান।

এসময় আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে তেলের পাইপলাইন বসানো নিয়ে মার্কিন কোম্পানি ইউনোকল আর আর্হেন্তাইন কোম্পানি ব্রিডাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। উভয়েই তালেবানের সাথে আলোচনায় বসে। অফিস খোলে আফগানিস্তানে।

জাতিসংঘ কাবুল মিউজিয়াম সীল করার চেষ্টা করে। তারপরও পাকিস্তানে পাচার হতে থাকে প্রচুর নিদর্শন। এই নিদর্শনগুলো সেখান থেকে চলে যায় দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী আর সংগ্রহকারীদের হাতে।

১৯৯৫ মার্চ কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলেন সমরনায়ক আহমাদ শাহ মাসুদ। হেরাতের দখল নিল তালেবান। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মতে, এসময় আফগান কৃষকরা ২০০০ টনেরও বেশি শুকনা আফিম উৎপাদন করত।

১৯৯৬ মে ওসামা বিন লাদেন সুদান থেকে বিতাড়িত হয়ে আফগানিস্তানে আসলেন, সেপ্টেম্বর: তালেবানরা কাবুল জয় করল। তালেবানদের হাতে খুন হলেন নাজিবুল্লাহ, জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য তালেবানরা নাজিবুল্লাহ’র লাশ একটা ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে রাখে। তালেবানদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বৃদ্ধি পেল।

পাকিস্তান আর তুর্কমেনিস্তানের সাথে ইউনোকলের চুক্তি সাক্ষর। চুক্তিতে ঠিক হল, ১৯৯৮ সালে ২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। পাইপলাইনটি দৌলতাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানে প্রবেশ করবে।

তালেবানদের বিরুদ্ধে উত্তর আফগানিস্তানে গঠিত হল নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। এদের পেছনে ভারত, ইরান, আর তাজিকিস্তানের মদত ছিল। নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সবচে পরিচিত মুখ সোভিয়েতবিরোধী মুজাহিদিন কমাণ্ডার আহমাদ শাহ মাসুদ।

১৯৯৭ তালেবানরা নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করে। এ-সময় কাবুলের ২২টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র একটি ছিল নারীদের জন্য। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির চাপে তারা নারীদের জন্য আরো কয়েকটি হাসপাতাল স্থাপনে বাধ্য হয়।

অক্টোবর তালেবানরা আফগানিস্তানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করে রাখে আফগানিস্তান ইসলামি ইমারাত। এর রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষিত হন মোল্লা ওমর। মাত্র তিনটি রাষ্ট্র এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল – পাকিস্তান, সৌদি আরব, আর সংযুক্ত আরব ইমারাত।

১৯৯৮ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের খোস্তে ক্রুজ মিসাইল হামলা চালায়। জাতিসংঘ কান্দাহার থেকে কর্মীদেরকে সরিয়ে নেয়। ইউনোকলের পাইপলাইন প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়।

ভূমিকম্পে তাখার প্রদেশে প্রায় ৮,০০০ মানুষের মৃত্যু।

১৯৯৯ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রেজল্যুশন ১২৬৭’র মাধ্যমে কথিত আল কায়েদা ও তালেবান স্যাংশন কমিটি গঠন করে। এই কমিটি গোষ্ঠী দুটিকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থায়ন, ভ্রমণ, ও অস্ত্র চালানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তালেবান সরকার ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘণ ও নারীদের ওপর ভয়ানক পিতৃতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়।

এ বছর আফগানিস্তানে ৪৬০০ টন আফিম উৎপাদিত হয়।

২০০০ জুলাই তালেবানরা আফিম উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ২ লক্ষ আফগানের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, আফগানিস্তানে তালেবান শাসন থাকুক বা না থাকুক, আফগান নারীদের তিন-চতুর্থাংশ ঐতিহ্যগত কারণেই চাদরি পরবেন। অংশগ্রহণকারীদের ৯০ শতাংশ বলেন, পোষাকের ব্যাপারে তালেবানরা যেসব হুকুম জারি করেছে, এগুলো তাঁদের কাছে একটা গুরুত্বহীন ইস্যু।

ইয়েমেনের আদেন বন্দরে ইউএসএস কোলে হামলা চালাল আল কায়েদা।

আহমেদ রাশিদ, তালিবান: মিলিট্যান্ট ইসলাম, অয়েল, অ্যান্ড ফান্ডামেন্টালিজম ইন সেন্ট্রাল এশিয়া

২০০১ মার্চ তালেবানরা বামিয়ানে দুটো বৌদ্ধমূর্তি ধবংস করে, ৩০০০ প্রাক-ইসলামি নিদর্শন ধবংস করে দেয়।

সেপ্টেম্বর ৯ আল কায়েদার আততায়ীদের হাতে খুন হন তালেবান-বিরোধী নর্দার্ন এলায়েন্সের কমাণ্ডার আহমাদ শাহ মাসুদ। পিটার বার্গেনের মতে, এই হত্যাকাণ্ড ৯/১১র সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য একটা সবুজ সংকেত ছিল।
সেপ্টেম্বর ১১ দুদিন পর ১১ সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত পেন্টাগন আর নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে – টুইন টাওয়ার নামে পরিচিত – আল কায়েদার হামলায় ৩,০০০ মানুষের মৃত্যু। ১৯ জন খুনীর একজনও আফগান ছিলেন না। খুনীদের নেতা মোহাম্মদ আতা ছিলেন একজন মিশরীয়। ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জন সৌদি নাগরিক। খুনীদের কেউ আফগান না হওয়া সত্ত্বেও এই হত্যাযজ্ঞকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আফগানিস্তানে হামলা চালাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ বুশ জুনিয়রের “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” সূচনা।* আফগানিস্তানে এই মিশনের নাম শুরুতে ছিল অপারেশন ইনফিনিট জাস্টিস, পরবর্তীতে নাম বদলে রাখা হয় অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম
* যুক্তরাজ্য শুরু থেকেই এই যুদ্ধের পার্টনার ছিল; ফ্রান্স, জার্মানি, ক্যানাডা, ও অস্ট্রেলিয়া ভবিষ্যৎ সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ঘোষিত উদ্দেশ্য “আফগানিস্তানের জঙ্গি শিবিরগুলো ধবংস করা।”
সেপ্টেম্বর ১৮ প্রেসিডেন্ট বুশ জুনিয়র একটা জয়েন্ট রেজল্যুশনে সাক্ষর করে সেটিকে আইনে পরিণত করেন যা পরবর্তীতে আফগানিস্তান আগ্রাসন, মার্কিন নাগরিকদের ওপর বেআইনী সরকারি নজরদারি, ও কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার প্রতিষ্ঠাকে বৈধতাদানে ব্যবহৃত হয়।

নভেম্বর ৯ উজবেক সামরিক নেতা আবদুল রাশিদ দোস্তুমের প্রতি অনুগত বাহিনী তালেবানদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় মাজার-ই-শরিফ। পরের সপ্তাহে ইঙ্গ-মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনী ও নর্দার্ন এলায়েন্সের হাতে তালেবান ঘাঁটিগুলোর পতন – ১১ তারিখে তলোকান আর বামিয়ান, ১২ তারিখে হেরাত, ১৩ তারিখে কাবুল, আর ১৪ তারিখে জালালাবাদ।
নভেম্বর ১৪ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রেজল্যুশন ১৩৭৮ পাস করে, এতে বলা হয়, আফগানিস্তানে সরকার গঠনে জাতিসংঘের “কেন্দ্রীয় ভূমিকা” থাকবে।

ডিসেম্বরের শুরুতে দক্ষিণপশ্চিম কাবুলের তোরা বোরা গুহায় ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পাওয়া যায়।
ডিসেম্বর ৩-১৭ আফগান মিলিশিয়াদের সাথে আল কায়েদার যোদ্ধাদের লড়াই চলে।
ডিসেম্বর ৫ সাক্ষরিত হয় বন চুক্তি, যাতে হামিদ কারজাইকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনিক প্রধান ঘোষণা করা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন এই চুক্তিটি গ্রহণ করে। চুক্তি সম্পাদনে ইরানের কূটনৈতিক সহায়তা ছিল, কারণ নর্দার্ন এলায়েন্সের পেছনে ইরানের সমর্থন ছিল।
ডিসেম্বর ৯ কান্দাহার সমর্পণ করে তালেবান। পালিয়ে যান মোল্লা ওমর। আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারের পতন ঘটে। তালেবান সরকারের পতনের পর পুরনো রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের ভল্ট থেকে প্রায় ২২,০০০ ব্যাক্ট্রীয় যুগের স্বর্ণনির্মিত নিদর্শনের সন্ধান মেলে। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের পাহাড়গুলোতে আল কায়েদার উপস্থিতি রয়ে যায়।
ডিসেম্বর ১৬ ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে যান লাদেন। আশ্রয় নেন পাকিস্তানে। ইউএস ইন্টিলিজেন্সের কাছে তোরা বোরা গুহায় লাদেনের উপস্থিতির নিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও তারা এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়নি। নেতৃত্ব দিয়েছে আফগানদের অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটি বাহিনী।
ডিসেম্বর ২০ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৩৮৬ প্রতিষ্ঠা করে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্টেন্স ফোর্স (ইসাফ)।

জার্মানির বন শহরে একটা সম্মেলন ডাকে জাতিসংঘ। তালেবানরা ছাড়া বাকি সব পক্ষ উপস্থিত ছিল।

ভনে রিডলি, ইন দ্য হ্যান্ডস অফ তালিবান

২০০১-২০০৯ মার্কিন কংগ্রেস আফগানিস্তানে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের মানবিক ও পুনঃনির্মাণ সাহায্য বরাদ্দ করে।

২০০২ মার্চ অপারেশন অ্যানাকোন্ডা, আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড়মাপের গ্রাউণ্ড অ্যাসল্ট, তোরা বোরার পর সবচে বড় সামরিক অপারেশন।

এপ্রিল ভার্জিনিয়া মিলিটারি ইন্সটিটিউটে এক বক্তৃতায় বুশ যুদ্ধবিধবস্ত আফগানিস্তান ‘পুনঃনির্মাণের’ ডাক দিলেন, নিজেদেরকে জর্জ মার্শালের উত্তরসূরী ঘোষণা করলেন।*
* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিম ইওরোপের যুদ্ধোত্তর পুনঃনির্মাণের মার্শাল পরিকল্পনা যাঁর নামে রাখা হয়েছিল।

জুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হল। হামিদ কারজাই হলেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান।* কাবুলে একটা জরুরী ভিত্তিতে আয়োজিত লয়া জিরগায় ১৫৫০ জন ডেলিগেট, যাঁদের ২০০ জন নারী, কারজাইকে নির্বাচিত করে।
* হামিদ কারজাই দুররানি পশতুনদের পোপালজাই গোত্রের মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে নিজ সরকার ও গোত্রের লোকজনের দুর্নীতি সহ্য করার অভিযোগ ওঠে। তাজিক-নেতৃত্বাধীন নর্দার্ন এলায়েন্স একটা প্রধানমন্ত্রীর পদ তৈরি করার চেষ্টা করা ব্যর্থ হয়, তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য নির্বাচিত সংসদের হাতে কিছু ক্ষমতা ন্যস্ত করতে সফল হয়।

কাবুল মিউজিয়াম থেকে চুরি যাওয়া মূল্যবান নিদর্শনগুলো ফিরিয়ে এনে মিউজিয়ামটি নতুন করে তৈরি করার কাজ শুরু হয়।

২০০৩ মে কাবুলে এক প্রেস ব্রিফিং’এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ডোনাল্ড রামসফেল্ড বললেন, “মূল সংঘাতের” অবসান ঘটেছে। এখন শুরু হবে স্থিতিশীলতা আর পুনঃনির্মাণের কাল। মাত্র ৮,০০০ মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে অবস্থান করবে।

আগস্ট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) আফগানিস্তানের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্টেন্স ফোর্সের (ইসাফ) নিয়ন্ত্রণ নিল। শুরুতে কেবল কাবুল ও তার আশেপাশের এলাকায় তৎপরতা সীমিত রাখলেও ২০০৫-৬ সালে ন্যাটো তার কর্মএলাকার সম্প্রসারণ ঘটায়। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ইসাফের সৈন্য সংখ্যা, মাত্র ৫০০০ সেনা নিয়ে শুরু করা বাহিনীটি পরবর্তীতে ৪২টি দেশের (তন্মধ্যে ২৮টি ন্যাটোভুক্ত) ৬৫,০০০ সেনার এক বিশাল বাহিনীতে পরিণত হয়।

২০০৪ জানুয়ারি লয়া জিরগার ৫০২ জন ডেলিগেট আফগানিস্তানের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেন।

অক্টোবর নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হলেন হামিদ কারজাই। নির্বাচনের তিনমাস পর ওসামা বিন লাদেন একটি ভিডিওটেপ প্রকাশ করেন। এতে তিনি ৯/১১য় টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসবাদী হামলার দায় স্বীকার করেন। ভিডিওটেপটি প্রচার করে কাতারভিত্তিক নেটওয়ার্ক আল জাজিরা। এ সময় সারা বিশ্বের মোট আফিমের চাহিদার ৮৭ শতাংশ মেটাচ্ছে আফগানিস্তান। মুনাফার অধিকাংশই ব্যয় হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে।

২০০৫ মে ২৩ আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র এক যৌথ ঘোষণা ইস্যু করলেন, যাতে দেশ দুটিকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দাবি করা হল।

সেপ্টেম্বর ১৮ দেশজুড়ে ওলেসি জিরগা (জনসাধারণের কাউন্সিল), মেশরানো জিরগা (মুরুব্বিদের কাউন্সিল), ও স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। এসব নির্বাচনে আফগান নারীরা ব্যাপকভাবে অংশ নেন। সংসদের উচ্চকক্ষে মোট ১০২টি আসনের মধ্যে ২৩টি আসন এবং নিম্নকক্ষে মোট ২৪৯টি আসনের মধ্যে ৬৮টি আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।

মাজার-ই-শরিফে একটা পরিশোধিত চিনিকল খোলা হল। জাতিসংঘ, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী, এবং আফগান সরকার সম্মিলিতভাবে প্রচারণা অভিযান চালিয়ে আফিম চাষ দমন করার চেষ্টায় নামে।

২০০৬ ইংরেজিতে পাঠদানের ব্যবস্থাসহ, ও সহশিক্ষার নীতিতে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ আফগানিস্তান পথচলা শুরু করল।

আফগানিস্তান জুড়ে দেখা দেয় ব্যাপক সহিংসতা। আত্মঘাতী বোমা হামলার সংখ্যা আগের বছরের ২৭ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৯। দ্বিগুণ হয়ে যায় দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটান বোমার সংখ্যা – ১৬৭৭।

বিশেষজ্ঞ সেথ জি. জোনস এই সহিংসতার জন্য মূলত আফগান সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন।

২০০৭ নির্বাসিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জহির শাহ।

মে আফগানিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ও ন্যাটো বাহিনীগুলোর এক যৌথ অভিযানে খুন হয়ে যান তালেবান কমাণ্ডার মোল্লা দাদুল্লাহ। তাকে হেলমান্দ প্রদেশের গেরিলা নেতা বলে বিশ্বাস করা হয়, যিনি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ও পশ্চিমাদের অপহরণ করে বেশ নাম করেছিলেন।

২০০৮ পশ্চিম হেরাত প্রদেশের শিনদান্দ জেলায় একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে চালানো এলোপাতাড়ি গুলিতে কয়েকজন আফগান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু। ফারাহ প্রদেশে এরকম আরেকটি ঘটনায় ১৪০ জন আফগান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু।

২০০৯ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তানে আরো ১৭,০০০ সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। তিনি একটা নতুন রণনীতির ঘোষণাও দিলেন, যেখানে আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধপ্রয়াসের সাফল্যকে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার সাথে যুক্ত করা হল। আফগান পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তার জন্য দেশটি আরো ৪,০০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর পরিকল্পনাও ব্যক্ত হল।

আগস্ট নির্বাচনে হামিদ কারজাই প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হন। কিন্তু বিরোধীরা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনেন। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে জাতিসংঘের মদতে একটা নির্বাচন অভিযোগ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যত ভোট প্রয়োজন, তার চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন হামিদ কারজাই।

নভেম্বর ৭ নভেম্বরে পুনঃনির্বাচনের প্রস্তাবে রাজি হন কারজাই। কিন্তু পুনঃনির্বাচনের হপ্তাখানেক আগে কারজাইয়ের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন এবং কারজাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কারজাইয়ের বৈধতা নিয়ে মার্কিনীদের মনে প্রশ্ন ওঠে, সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন জানান ভবিষ্যতে বেসামরিক সহায়তা পেতে হলে দুর্নীতি দমনে কারজাই প্রশাসনকে আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।

ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামা একটা জাতীয়ভাবে টেলিভাইজড বক্তৃতায় আফগানিস্তানে আরো ৩০,০০০ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যেই দেশটিতে ৬৮,০০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল। আট বছরে এই প্রথম আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা হল, প্রেসিডেন্ট ওবামা বললেন ২০১১ সালের জুলাইয়ে শুরু হবে সেনা প্রত্যাহার।

২০১০ লিসবনে এক সম্মেলনে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটা ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করল। তাতে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তানের নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব আফগান বাহিনীগুলোর হাতে অর্পণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হল। ২০১১ সালের জুলাইয়ে এই রূপান্তর পর্ব শুরু হবে।

২০১১ মে ১ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে খুন হলেন আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেল, রেকর্ড সংখ্যক মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তান আগ্রাসন সমর্থন করেন না।

জুন বিশেষত ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতাদের চাপে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া জোরদার করার পরিকল্পনা ব্যক্ত করলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ২০১২ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে ৩৩,০০০ সেনা প্রত্যাহারের একটা রূপরেখা প্রকাশ করলেন তিনি, যার মধ্যে ১০,০০০ সেনাকে ২০১১’র শেষ নাগাদ প্রত্যাহার করা হবে।

এ বছর তালেবান নেতৃত্বের সাথে শান্তি আলোচনার প্রাথমিক পর্বটা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

আফগান সরকারের সাথে তালেবানদের সংলাপের কথা ছিল। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর আফগান সরকার পক্ষের প্রধান আলোচনাকারী বুরহানউদ্দিন রাব্বানি আততায়িত হওয়ায় হামিদ কারজাই সংলাপ স্থগিত করেন। অভিযোগের আঙুল ওঠে পাকিস্তান-ভিত্তিক হাক্কানি নেটওয়ার্কের দিকে, যদিও তারা দায় নিতে অস্বীকার করেন।*
* নেটওয়ার্কের নাম তালেবানদের শীর্ষ নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির নামে।

ডিসেম্বর ৫ জার্মানির বনে ২০১৪ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয় বন সম্মেলন।

২০১২ জানুয়ারি তালেবানরা কাতারে একটা অফিস খোলার ব্যাপারে চুক্তি সই করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে যাকে দেখা হচ্ছিল একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য প্রয়োজনীয় শান্তি আলোচনার দিকে একটি পদক্ষেপ হিশাবে। কিন্তু দুইমাস পর বন্দী বিনিময় ইস্যুতে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে ওয়াদাভঙ্গের অভিযোগ এনে তারা প্রাথমিক সংলাপ স্থগিত করে।

ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সেক্রেটারি লিওন পেনেট্টা ঘোষণা করেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানে সংঘাত মিশনগুলো গুটিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে পেন্টাগনের।

অ্যালেক্স স্ট্রিক ভ্যান লিনচনটেন ও ফেলিক্স কুয়েন (সম্পা.), পোয়েট্রি অফ দ্য তালিবান

২০১৩ ন্যাটো দেশজুড়ে নিরাপত্তার ভার তুলে দিল আফগান বাহিনীগুলোর হাতে। এই হস্তান্তর ঘটে ঠিক সেইদিনে, যে দিন কাতারের দোহায় তালেবানদের সাথে মার্কিন কর্মকর্তাদের সংলাপ পুনরায় চালু হওয়ার ঘোষণা আসে। সম্প্রতি তালেবানরা কাতারে তাদের অফিস খুলেছিল। হামিদ কারজাই এই ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেননি। তিনি এটাকে দেখলেন তালেবানদেরকে বৈধতা দেয়ার একটা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিশাবে। এর জবাব দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা স্থগিত করলেন কারজাই। কিন্তু তাঁর মেয়াদ খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল।

২০১৪ প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিশেষজ্ঞ ও একজন নৃবিজ্ঞানী আশরাফ ঘানি। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সাথে ক্ষমতা ভাগ করে নেয়ার চুক্তি সই করলেন, যে চুক্তির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরির কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল।

আনন্দ গোপাল, নো গুড মেন অ্যামাং দা লিভিং: আমেরিকা, দ্য তালিবান, অ্যান্ড দ্য ওয়ার থ্রো আফগান আইজ

২০১৫ পূর্ব আফগানিস্তানে কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) অ্যাফিলিয়েটদের উত্থান। কয়েক মাসের মধ্যে তারা তালেবানদের কাছ থেকে নানহারগড় প্রদেশের একটা বড় অংশ নিয়ে নিল। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে কুরআন অবমাননার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফারখুন্দা মালিকজাদা নামের এক ২৭-বছর বয়সী ধার্মিক মুসলমান মহিলাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মেরে ফেলল উন্মত্ত জনতার একটি দঙ্গল। কাতারে তালেবানদের প্রতিনিধিদের সাথে আফগান সরকারের প্রতিনিধিরা এক অনানুষ্ঠানিক শান্তি আলোচনায় বসল। তালেবানরা স্বীকার করলেন, তাদের নেতা মোল্লা ওমর কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তালেবানদের নতুন নেতা হলেন মোল্লা আখতার মনসুর। একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলে ৮০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু।

২০১৬ পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে মার্কিনীদের এক ড্রোন হামলায় খুন হলেন আফগান তালেবানদের নতুন নেতা মোল্লা আখতার মনসুর। আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের লস্কর গাহ আর উত্তরাঞ্চলের কুন্দুজ শহরের প্রায় পুরোটাই এ-সময়ের মধ্যে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আফগান সরকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হিজবে ইসলামির সাথে একটি শান্তিচুক্তি সই করে এবং সংগঠনটির কাবুলের কসাই নামে পরিচিত নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে সব ধরণের দায় থেকে মুক্তি দেয়।

২০১৭ কান্দাহারে এক বোমা হামলায় ৬ ইমারাতি কূটনীতিকের মৃত্যু। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) তৎপরতা বৃদ্ধি পেল।* কাবুলে আইএসের হামলায় ৩০ জন নিহত ও ৫০ জনেরও বেশি আহত হলেন। আফগানিস্তানের নানহারগড় প্রদেশে তোরা বোরা পার্বত্য অঞ্চলটি দখলে নিল আইএস। নানগারহরের এক গুহায় সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধাদের ওপর “দা মাদার অফ অল বোম্বস” (মোয়াব) নিঃক্ষেপ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় তালেবানরা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। কাবুলে নজিরবিহীন মাত্রায় ঘটতে লাগল আত্মঘাতী হামলা।
* আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসা একটি সশস্ত্র ইসলামপন্থী সংগঠন। ২০১৪ সালের ২৯ জুন সংগঠনটির নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে ইরাকের দিয়ালা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ এই খেলাফতের পতন ঘটে।

ওবামার আফগানিস্তান নীতিতে পরিবর্তন আনলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি জানালেন, অতীতে নির্ধারণ করা কোন সময়সীমা নয়, “মাঠের পরিস্থিতি” কেমন সেই বিবেচনায় সেনা প্রত্যাহার করা হবে। আফগানিস্তানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজে সাহায্য করার জন্য ভারতের প্রতি আহবান জানালেন তিনি, আর সন্ত্রাসবাদীদেরকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে পাকিস্তানকে দুষলেন।

২০১৮ কাবুলে তালেবানরা এক গুচ্ছ জঙ্গি হামলা চালান। এতে ১১৫ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জের ধরে পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে, ট্রাম্প প্রশাসন দেশটিতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা বাতিল করে।

তালেবানদের সাথে দরকষাকষি করতে আফগানিস্তানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমাই খালিলজাদকে তাঁর বিশেষ প্রতিনিধি নিযুক্ত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০১৯ বিতর্কিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হলেন আশরাফ ঘানি।

ফেব্রুয়ারি দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তালেবানদের মধ্যে শান্তি সংলাপ তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

সেপ্টেম্বর ট্রাম্প শান্তি সংলাপ বন্ধ করে দেন। তিনি জানান, তালেবানদের আক্রমণে এক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ায়, তিনি ক্যাম্প ডেভিডে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আর তালেবান নেতৃত্বের সাথে হতে যাওয়া একটা গোপন বৈঠক বাতিল করেছেন।

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৯ দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমাই খালিদজাদ আর শীর্ষ তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গণি বারাদারের মধ্যে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত।

সেপ্টেম্বর ১২ দুই দশকে প্রথমবারের মত আফগান সরকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্বাতারের দোহায় তালেবানদের সম্মুখীন হল। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানদের পূর্বের একটা চুক্তি অনুসারে আফগান সরকার ৫,০০০ তালেবান যোদ্ধাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার প্রেক্ষিতে শুরু হয় এই আন্তঃআফগান সংলাপ। আফগান সরকার যুদ্ধবিরতির আহবান জানাল, তালেবানরা দেশটি ইসলামি ব্যবস্থায় শাসিত হবে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পুনরায় ব্যক্ত করল।

নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আফগানিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা এল। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টলটেনবার্গ হুঁশিয়ার করলেন। তিনি বললেন, এই মুহূর্তে সেনা প্রত্যাহার করলে আফগানিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে এবং ইসলামিক স্টেট তাদের খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে।

২০২১ এপ্রিল নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলেন।

জুলাই ৪-৬ তালেবানদের হাতে গজনীর পতন ঘটে।
জুলাই মার্কিন সেনাবাহিনী বাগরাম বিমানবন্দর ছেড়ে গেল।

আগস্ট সেনা প্রত্যাহার করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আগস্ট ১৫ তালেবানদের হাতে কাবুলের পতন ঘটল। তালেবানরা রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে ঢোকার কয়েক ঘন্টা আগে প্রেসিডেন্ট ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সাথে তালেবানদের আলোচনা চলতে থাকে।
আগস্ট ১৭ এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ত্রানসংস্থা ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা প্রদান, এবং “শরিয়তের সীমার মধ্যে” নারী অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
আগস্ট ১৯ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা কেন্দ্রিক উত্তেজনায় জালালাবাদে তালেবান যোদ্ধাদের প্রকাশ্য গুলিবর্ষণে একাধিক প্রতিবাদকারীর মৃত্যু।
আগস্ট ২৬ কাবুল বিমানবন্দরে আইএস-খোরাসানের হামলায় ১৩ জন মার্কিন সামরিক ব্যক্তিত্ব ও ১৭০ জনেরও বেশি আফগান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু। প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ১০ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু। এদের কনিষ্ঠতম মালিকা আহমাদি, বয়স ২ বছর।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের বৈদেশিক রিজার্ভ ফ্রিজ করল। ইওরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়ে দিল, তালেবান সরকারের সাথে তাঁরা কোন ধরণের আলাপ-আলোচনায় অংশ নেবে না। পাকিস্তান, চীন, ও রাশিয়া কিছু শর্তসাপেক্ষে তালেবান সরকারের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহ দেখাল।

সেপ্টেম্বর ক্লাসকক্ষে জেন্ডারের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি করা হল।

২০২২ মার্চ ২৩ মাধ্যমিক ইশকুলগুলো খোলা রাখার যে নীতি ইতোপূর্বে তালেবান সরকার ঘোষণা করেছিল, তা থেকে তারা হঠাৎ সরে আসল। এটা ছিল ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিন। দেশটির বাচ্চা মেয়েরা ইশকুলে হাজির হলে পরে তাদের বাড়িতে চলে যেতে বলা হল।

মে ৭ তালেবান সরকারের পাপ ও পূন্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেয়েদের জনপরিসরে পর্দা করার হুকুম দেয়া হল। তাঁদের ঘরে থাকার উপদেশ প্রদান করা হল। মাহরাম পুরুষের সাহচর্য ছাড়া মহিলাদের জন্য একা একা আন্তঃনগর ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হল।

জুন ২২ আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে ১ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু।

জুলাই ৩১ যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আল কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরির মৃত্যু।

সেপ্টেম্বর ৫ কাবুলস্থ রুশ দূতাবাসে আইএসের এক আত্মঘাতী হামলায় ২ রুশ কূটনীতিকের মৃত্যু।
সেপ্টেম্বর ৩০ রাজধানী কাবুলের একটি শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৯ জনের মৃত্যু। নিহতদের অনেকেই টিনএজার, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।

নভেম্বর ১০ আফগান নারীদের জন্য পার্ক, জিমনেসিয়াম, ও হাম্মামখানা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হল। সরকারের তরফে জানানো হল, এর কারণ যথাযথভাবে হিজাব না করা ও জেন্ডার পৃথকীকরণ নিয়ম ভঙ্গ করা।
নভেম্বর ২০ ব্যাভিচারের দায়ে ১৯ জনকে প্রকাশ্যে চাবকানো হল।

ডিসেম্বর চুরি, ডাকাতি, ব্যাভিচার, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, ঘর পালানো, ও মাদক বিক্রয়ের দায়ে চাবুক মেরে শাস্তিপ্রদান করার ঘটনা ঘটল।
ডিসেম্বর ৮ একজন দোষী সাব্যস্ত হওয়া খুনীর মৃত্যুদণ্ড হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে প্রকাশ্যে কার্যকর করা হল।
ডিসেম্বর ২১ আফগান নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। ডিসেম্বর ২৪ আফগান নারীদের এনজিওতে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল।

আফগানিস্তানে ২০০১ সালের অক্টোবরে মার্কিন হামলার পর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধরত পক্ষগুলোর হাতে প্রায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুই দশকে এই আগ্রাসনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে প্রায় ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আগ্রাসনের কারণে ২ কোটি ৭০ লক্ষ আফগান ভিটেমাটি হারিয়ে শরণার্থী হয়ে পড়েছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান আর ইরানে যাপন করছেন মানবেতর জীবন। (Watson Institute for International and Public Affairs 2022)

২০২৩ ফেব্রুয়ারি নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হল।

মার্চ ৯ জাতিসংঘ জানাল, নারী ও কন্যা শিশুদের জন্য দুনিয়ার সবচে নিপীড়নমূলক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান, যেখানে তাঁদের মৌলিক অধিকার বলেই কিছু আর অবশিষ্ট থাকছে না।

এপ্রিল ৬ তালেবানদের প্রধান মুখপাত্রের অফিস কাবুল থেকে সরিয়ে কান্দাহারে নিয়ে যাওয়া হল। উল্লেখ্য, কান্দাহার তালেবান আন্দোলনের রুহানি জন্মভূমি বিবেচিত হয়। কান্দাহার সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদার ঘাঁটিও বটে।

জুলাই ৪ বিউটি সেলুন বন্ধ করার হুকুম দেয়া হল, ক্ষতিগ্রস্ত হলেন ৬০ হাজার পেশাজীবী নারী।
জুলাই ১৯ বিউটি সেলুনের ওপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মহিলারা রাস্তায় নামলে জলকামান ব্যবহার করে ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হল।

২০২৪ জানুয়ারি ১ তালেবান সরকারের পাপ ও পুণ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানালেন, “হিজাব যথাযথভাবে” না করায় অনির্দিষ্ট সংখ্যক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ১৯ এক ভূমিধ্বসে তলিয়ে গেল নূরিস্তান প্রদেশের তাতিন উপত্যকার নাকরে গ্রাম, অন্তত ২৫ জন মানুষের মৃত্যু।
ফেব্রুয়ারি ২০-মার্চ ১৩ দেশব্যাপী বন্যা, বৃষ্টি আর তুষারপাতের ফলে প্রতিকূল হয়ে ওঠা আবহাওয়ার দরুণ অন্তত ৬০ জন মানুষের মৃত্যু।

মার্চ ১৮ খোস্ত আর পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের দুটি বিমান হামলায় ৫ নারী ও ৩ শিশুর মৃত্যু। প্রতিক্রিয়ায়, আফ-পাক সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করল তালেবান সরকার।
মার্চ ২১ কান্দাহারের এক ব্যাংকের ভেতরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২১ জনের মৃত্যু, আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে।
মার্চ ৩১ গজনী প্রদেশের গিরো জেলায় এক ভূমিমাইন বিস্ফোরণে ৯ শিশুর মৃত্যু, বাচ্চাগুলো খেলনা মনে করে ভূমিমাইনটি নিয়ে খেলছিল।

এপ্রিল ১২-১৪ কাবুলসহ ২০টি প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের দরুণ দেখা দেয়া চকিত বন্যায় অন্তত ৩৩ জন মানুষের মৃত্যু।
এপ্রিল ১৭ “জাতীয় ও ইসলামি মূল্যবোধ আমলে নিতে” ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে নূর টিভি ও বারইয়া টিভি স্থগিত করার হুকুম দিল তালেবান সরকার।
এপ্রিল ২৯ হেরাত প্রদেশের গুজারা জেলায় এক শিয়া মসজিদের ভেতরে বন্দুকধারীর গুলিতে ৬ ব্যক্তি নিহত।

মে ৮ বাদাখশান প্রদেশের ফৈজাবাদে এক মোটরসাইকেল বোমা হামলায় তালেবান সরকারের ৩ নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে।
মে ১০ বাঘলান প্রদেশে চকিত বন্যায় ১৫০-৩০০ মানুষের মৃত্যু।
মে ১৭ বামিয়ানে এক বন্দুক হামলায় ৬ ব্যক্তি নিহত। এদের মধ্যে ৩ জন স্পেনের নাগরিক। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে। ঘোর ও ফারইয়াব প্রদেশে চকিত বন্যায় অন্তত ৮৪ জন মানুষের মৃত্যু।
মে ২৫ বাদাখশান ও বাঘলান প্রদেশে চকিত বন্যায় অন্তত ১৫ জন মানুষের মৃত্যু।

জুন ১ নানহারগড় প্রদেশের মোমান্দ দারা জেলার একটি রিভার ক্রসিংয়ে এক নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২০ জন মানুষের মৃত্যু।

তথ্যসূত্র

রাফিন, ইরফানুর রহমান। ২০২২। সময়রেখা: মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে করোনাসংকট পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত ঘটনাপঞ্জি। ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ।

Ahmad, Eqbal. 2001. Terrorism: Theirs & Ours, New York: Seven Stories Press.

Butt, Riazat. 2023. “Two-Year Timeline of Events in Afghanistan since 2021 Taliban Takeover.” Associated Press. August 14.
https://apnews.com/article/afghanistan-taliban-second-year-timeline-490bab098864b13d8f8cdb67ae044bee.

BBC. 2019. “Afghanistan profile – Timeline.” BBC, September 9.
https://www.bbc.com/news/world-south-asia-12024253

Bloch, Hannah. 2021. “A Look At Afghanistan’s 40 Years Of Crisis — From The Soviet War To Taliban Recapture.” National Public Radio – NPR, August 19.
https://www.npr.org/2021/08/19/1028472005/afghanistan-conflict-timeline

Braithwaite, Rodric. 2011. Afgantsy: The Russians in Afghanistan 1979-89. London: Profile Books.

Galeano, Eduardo. 2013. Children of the Days: A Calendar of Human History. Translated by Mark Fried. New York: Nation.

Gritzner, Jeffrey A. 2007. Afghanistan. New York: Chelsea House.

Haddad, Mohammed. 2021. “Afghanistan: Visualising the impact of 20 years of war.” Al-Jazeera Interactives, May 10.
https://interactive.aljazeera.com/aje/2021/afghanistan-visualising-impact-of-war/index.html

Javaid, Osama Bin. 2023. “UN holds crucial Afghanistan talks in Qatar, without Taliban.” Al Jazeera, May 1.
https://www.aljazeera.com/news/2023/5/1/un-holds-crucial-afghanistan-talks-in-qatar-without-taliban

Karnad, Ribhu & Raghu. 2019. “You’ll Never See the Iconic Photo of the ‘Afghan Girl’ the Same Way Again.” The Wire, March 12.
https://thewire.in/media/afghan-girl-steve-mccurry-national-geographic

Laub, Zachary, and Maizland, Lindsay. 2021. “The U.S. War in Afghanistan.” Council on Foreign Relations – cfr, September 27.
https://www.cfr.org/timeline/us-war-afghanistan

Mark, Joshua J. 2019. “Zoroastrianism.” World History Encyclopedia. Last modified December 12, 2019. https://www.worldhistory.org/zoroastrianism/.

Naveed, Muhammad Bin. 2015. “Gandhara Civilization.” World History Encyclopedia. Last modified July 07, 2015. https://www.worldhistory.org/Gandhara_Civilization/.

Otfinoski, Steven. 2004. Afghanistan. New York: Facts on File.

Reidel, Bruce. 2014. What We Won: America’s Secret War in Afghanistan, 1979-89. Washington, D.C.: Brookings Institution Press.

Revolutionary Association of the Women of Afghanistan (RAWA) Website
http://www.rawa.org/index.php

Rotheimer, Ralf. 2022. “Ancient Afghanistan.” World History Encyclopedia. Last modified August 08, 2022. https://www.worldhistory.org/Ancient_Afghanistan/.

Runion, Meredith L. 2007. The History of Afghanistan. Westport, Connecticut: Greenwood Press.

Wahab, Shaista, and Youngerman, Barry. 2007. A Brief History of Afghanistan. New York: Facts On File.

Watson Institute for International and Public Affairs. n. d. “HUMAN AND BUDGETARY COSTS TO DATE OF THE U.S. WAR IN AFGHANISTAN, 2001-2022.” Accessed September 11, 2022.
https://watson.brown.edu/costsofwar/figures/2021/human-and-budgetary-costs-date-us-war-afghanistan-2001-2022

নোট: ইরফানুর রহমান রাফিনের নন-ফিকশন সময়রেখা ঢাকার দিব্যপ্রকাশ কর্তৃক ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। এই ব্লগটি সেই বই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ও সিলেটের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সময়রেখা, এবং অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে।

অনলাইন অর্ডার লিংকসমূহ

দিব্যপ্রকাশ । বাতিঘর । বইবাজার । বইয়ের দুনিয়া । বইফেরী । বুক হাউজ । ওয়াফিলাইফ । রকমারি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *