
পূর্ব তুর্কিস্তান
Featured Image: Wikimedia Commons.

Unrepresented Nations & Peoples Orgazination
সাল
৫৭০ হযরত মুহাম্মদের (সা.) জন্ম।
৫৭৬ স্থাপিত হল কোক তুর্ক খানাত।
৭৪৪ স্থাপিত হল তোকুজ ওঘুজ খানাত।*
* উইঘুর সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত।
৭৫৪ তেরখিন শিলালিপিতে উইঘুরদের তুর্কিচভাষী পরিচয়ের ওপর জোরারোপ করা হল। তাঁদের বলা হল “তুর্ক বুদুন”। যার অর্থ: তুর্কি।
৮৪০-১২১৩ কারাখানিদ খানাত।*
* মধ্য এশিয়ার প্রথম তুর্কিচভাষী রাজ্য।
৮৪৩ আন্তঃমঙ্গোলিয়ায় হামলা চালিয়ে ১০,০০০ যাযাবর উইঘুরকে হত্যা করল তাং সাম্রাজ্য।
৮৬৬ স্থাপিত হল ইদিকুত উইঘুর রাজ্য।
৮৭০ কানসু উইঘুর রাজ্য।
৯৬০ সুলতান সুতুক বুগরা খানের নেতৃত্বে তুর্কিচভাষীরা ব্যাপকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে।
৯৯৯ কারাখানিদরা সামানীয়দের কাছ থেকে ট্রান্সঅক্সিয়ানা নিয়ে নিল।
১০০৬ ইন্দো-ইওরোপীয় বৌদ্ধ রাজ্য খোটান জয় করল কারাখানিদরা।
১০৯৬ কারাখানিদদের কাছে আকসু, তুমশুক, আর কুচা হারাল ইদিকুত উইঘুররা।
১১৩০ মঙ্গোলীয় খিটানরা প্রতিষ্ঠা করল কারা খাতাই সাম্রাজ্য।*
*এই সাম্রাজ্য কারাখানিদ খানাত আর ইদিকুত উইঘুর রাজ্য উভয়ের ওপর সার্বভৌমত্ব কায়েম করে।
১২০৬ মঙ্গোলদের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠলেন তেমুজিন, নাম নিলেন চেঙ্গিজ খান।*
* চেঙ্গিজ খানের জন্মগত নাম তেমুজিন। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের এই প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া চরিত্রগুলোর একটি। তিনি একদিকে যেমন মঙ্গোলদেরকে একটি সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছেন, অন্যদিকে যেখানেই গেছেন স্থানীয়দের ওপর চালিয়েছেন নজিরবিহীন নৃশংসতা।
১২০৯ ইদিকুত উইঘুররা চেঙ্গিজ খানের কাছে স্বেচ্ছায় নতিস্বীকার করে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের করদ রাজ্যে পরিণত হল।
১২২৭-১৩৪৭ চাগতাই খানাত।*
১৩৪৭-১৪৬২ মুঘলিস্তান।
১৩৯০-৯৯ মুঘলিস্তানের মুসলিম খান চাগতাই খিজির খোজা কোচো-তুরপান অঞ্চল জয় করলেন এবং কোচো ও তুরপানের বৌদ্ধ উইঘুরদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করলেন।
১৫১৪-১৭০৭ ইয়ারকেন্ত খানাত।
১৬৩৪-১৭৫৮ জুঙ্গার খানাত।
১৭৫৯-১৮৬৩ পূর্ব তুর্কিস্তান এ সময় মাঞ্চু দখলদারিত্বে ছিল।
১৮৬৪-৭৭ স্বাধীন ইয়েত্তে শেহের রাজ্য।
১৮৭৮-১৯১২ পূর্ব তুর্কিস্তান দ্বিতীয়বারের মত মাঞ্চু দখলদারিত্বে গেল।
১৮৮৪ নভেম্বর ১৮ পূর্ব তুর্কিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঞ্চু সাম্রাজ্যের সীমানাভুক্ত করে নেয়া হল। অঞ্চলটির নতুন নাম দেয়া হল “শিনচিয়াং”, যার অর্থ: নয়া ভূখণ্ড।* শুরু হল হান-হুইদের উপনিবেশায়ন।
* পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতাকামীরা এই নামটি প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা পরম্পরাগত নাম পূর্ব তুর্কিস্তান ব্যবহার করেন। এই রচনার লেখক তাঁদের একজন সমর্থক হওয়ায় রচনার সর্বত্র পূর্ব তুর্কিস্তান ব্যবহৃত হয়েছে।
১৯১২ তমুর খালফার নেতৃত্বে কুমুল অভ্যুত্থান।
১৯১৫ আহমেদের নেতৃত্বে তুরপান অভ্যুত্থান।
১৯১৭ মোহাম্মেদ আলি খানের নেতৃত্বে কুচা অভ্যুত্থান।
১৯২৩ সালিদিনের নেতৃত্বে কাশগড় অভ্যুত্থান।
১৯২৪ গুপ্তঘাতকদের হাতে খুন হলেন পূর্ব তুর্কিস্তানের জাতীয় আন্দোলনের পিতা খ্যাত আবদুলকাদির দামোল্লা।
১৯৩৩-৩৪ পূর্ব তুর্কিস্তানের তুর্কিচভাষী ইসলামি প্রজাতন্ত্র।
১৯৩৪-৪৩ চীনা সমরপ্রভু শেং শিকাইয়ের সন্ত্রাসের রাজত্ব।
১৯৪৪-৪৯ পূর্ব তুর্কিস্তানের দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র।
১৯৪৯ পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।
১৯৫২ পূর্ব তুর্কিস্তানের চীনা পুতুল প্রশাসক বোরহান শহিদি জানালেন, ১৯৪৯ সাল থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার “চীনের শত্রুকে” খতম করা হয়েছে।
১৯৫৪ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শিনচিয়াং কমিটির আনুষ্ঠানিক পত্রিকা শিনচিয়াং ডেইলিতে দাবি করা হল, আরো ৩০ হাজার “প্রতিবিপ্লবী”কে খতম করা হয়েছে।
১৯৫৫ পূর্ব তুর্কিস্তানে শিনচিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠন করল চীন। গড়ে তুলল নতুন কৃষিকেন্দ্রিক গ্রাম ও শিল্প নগর। হান চীনাদের বসতিস্থাপন করতে উৎসাহ দিল।
১৯৬০-৬৯ পূর্ব তুর্কিস্তানের তারিম অববাহিকার লোপ নূরে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করল চীন।
১৯৬৪ লোপ নূরে প্রথম সফল পরীক্ষা চালাল চীন।
১৯৯০ বারেন অভ্যুত্থান।
১৯৯৪ কাশগড়ে বান ছাও মেমোরিয়াল পার্ক গঠন করল পূর্ব তুর্কিস্তান কর্তৃপক্ষ। হাজার বছর আগে হানদের পূর্ব তুর্কিস্তান বিজয় উদযাপন করতে। ২০১০ সালে পার্কটিকে পান্টু সিটি সিনিক এরিয়ায় সম্প্রসারিত করা হয়।
১৯৯৭ “ইসলামি মৌলবাদ ও উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদ”য়ের জুজু দেখিয়ে পূর্ব তুর্কিস্তানের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক উৎসব ওরদাম পাদিশাহ মাজারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।*
* এ বছর থেকেই অন্য মাজারকেন্দ্রিক উৎসবগুলোও ক্রমবর্ধমান সরকারি বিধিনিষেধের আওতায় আসে।
২০০০-০৫ চীন দাবি করল, বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলার পেছনে পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামি আন্দোলনের হাত আছে।
২০০৭-১৫ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি পূর্ব তুর্কিস্তান জুড়ে একের পর এক মাজারকেন্দ্রিক উৎসব বন্ধ করে দেয়া হতে লাগল: নিয়ার নিকটবর্তী ইমাম জে’ফিরি সাদিক মাজার, ইয়েংগিসারের চুজে পাদিশাহিম মাজার, খোটানের নিকটবর্তী উজমে আর ইমাম অসিম মাজার।
২০০৯ পূর্ব তুর্কিস্তানের রাজধানী উরুমকিতে স্থানীয় উইঘুরদের সাথে বসতিস্থাপনকারী হান চীনাদের দ্বন্দ্বে ২০০ জন নিহত। এর প্রতিক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যায় সেনা পাঠাল চীন।
২০১৩-১৪ কাশগড়ে এক সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২১ জন নিহত। এই ঘটনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী “সন্ত্রাসবাদী”দের দুষল চীন। প্রবাসী উইঘুর নেতারা বললেন, জুলুমকে জায়েজ করার জন্য চীন বাস্তব অন্যায়ে রং চড়াচ্ছে।
২০১৪-২০ “উন্নয়ন” ও “পরিবেশ রক্ষার” নামে উইঘুরদের সমাধিগুলো ধবংস করতে শুরু করল চীন রাষ্ট্র।
২০১৫ ইয়াং ওয়েইওয়েইয়ের অপারেশনাল রিসার্চ অন রিস্ট্রেইনিং দ্য ইনফিল্ট্রেশন অফ রিলিজিয়াস এক্সট্রিমিস্ট থট প্রকাশিত হল। নিবন্ধটিতে বলা হল, “ধর্মীয় উগ্রপন্থী চিন্তাধারা” মোকাবেলায় ইসলামের একটি “ঐক্যবদ্ধ”, “নিয়ন্ত্রিত”, ও “রাষ্ট্র-অনুমোদিত” সংস্করণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পূর্ব তুর্কিস্তানের “বাড়তি” মসজিদগুলো ধবংস করে ফেলতে হবে।
২০১৫-২০২০ রাষ্ট্রীয় “চীনাকরণ” নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে, মসজিদগুলো চীনের জাতীয় পতাকা ওড়াতে শুরু করল। প্রদর্শন করতে শুরু করল বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ব্যানার। যা “জাতীয় সংহতি” ও “চৈনিক স্বপ্ন” জাতীয় কমিউনিস্ট পার্টির মূল্যবোধগুলো উর্ধ্বে তুলে ধরবে।
২০১৬ “মসজিদ সংস্কার” প্রচারাভিযানের শুরুয়াত। পুরনো ভবনগুলো মুসল্লিদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এই অজুহাত দিয়ে পুরো পূর্ব তুর্কিস্তান জুড়ে হাজারও মসজিদ ধবংস করা হল। কাশগড়ের ৭০% মসজিদ এভাবে ধবংস হয়ে গেল।
২০১৭ জুলাই দোরবুলিন মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হল।
সিসিপি কর্মকর্তারা দোরে দোরে ঘুরে উইঘুর পরিবারগুলোকে বুঝাতে লাগলেন, “তাঁদের জীবনশৈলী সেকেলে হয়ে গেছে।” উইঘুর শৈলীতে বানানো ঘরবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেগুলো মূল ভূখণ্ডের শৈলীতে নবরূপে নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়ে উঠল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় মুসলমানদের পুরো পরিবার একসাথে বসে খাওয়াদাওয়া করার ঐতিহ্যিক চর্চা তীব্রভাবে সমালোচিত হল।
পূর্ব তুর্কিস্তানের ইসলামি স্থাপত্যকলা সাধারণভাবে আক্রমণের মুখে পড়ল। হোটানের বাহার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ওপরকার গম্বুজকে একটা অষ্টভুজাকার কাঠামো দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হল।
২০১৮ কারগিলিক জামে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হল। আগের বছর এই মসজিদের ইমাম ক্বারি হাজিমকে আটক করা হয়েছিল। পরে কারা হেফাজতে মারা যান। মাতইয়াগ জামে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হল। দুই দশক আগে মুসলমান সম্প্রদায়ের অর্থায়নে এই মসজিদটি নির্মিত হয়। কারামাঈ জেলায় সামষ্টিকভাবে নামাজ পড়ার আর একটি স্থানও অবশিষ্ট রইল না।
মার্চ খোটানের প্রায় ৮০০ বছর পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও স্থানীয় মুসলমানদের সম্প্রদায়গত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ইউতিয়ান আইতিকা মসজিদ ধবংস করা হল। অঞ্চলটিকে পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তরিত করার বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্ব তুর্কিস্তানের বৃহত্তম মসজিদ কেরিয়া ঈদ কাহের গেটহাউজ ধবংস করা হল।
মানবাধিকার সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অভিযোগ করল, চীন নজরদারি প্রযুক্তির সাহায্যে পূর্ব তুর্কিস্তানে তাদের নিপীড়ন বৃদ্ধি করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে রিএডুকেশন ক্যাম্পে আটক করছে। একই বছর, জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার প্যানেল কিছু “বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন” উদ্ধৃত করে বলে, পূর্ব তুর্কিস্তানের উগ্রবাদ-বিরোধী কেন্দ্রগুলোতে দশ লক্ষেরও বেশি লোককে আটক রাখা হয়েছে। তারা এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, অঞ্চলটিকে “গোপনীয়তার আড়ালে এক বিশাল বন্দিশিবিরে” পরিণত করেছে চীন।
২০১৯ এপ্রিল পার্কিং লট বানানোর অজুহাত দিয়ে খোটানের সুলতানিম কবরস্থান গুঁড়িয়ে দেয়া হল। এই সমাধিস্থলে ৪ জন সুলতানের সমাধি আছে। যা মুসলমান তীর্থযাত্রীদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল।
২০২০ সেপ্টেম্বর দ্য অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হল, পূর্ব তুর্কিস্তানের ৬৫ শতাংশ মসজিদ (সংখ্যায় প্রায় ১৬,০০০) “সরকারি নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ধবংস হয়ে গেছে।”
২০২২ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হল, পূর্ব তুর্কিস্তানে চীনা নীতিগুলোকে মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে গণ্য করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
BBC. 2023. “Xinjiang profile.” BBC, August 25.
https://www.bbc.com/news/world-asia-pacific-16860974
East Turkistan Government in Exile. n.d. “History of East Turkistan.” Last updated December 2023.
https://east-turkistan.net/history-of-east-turkistan/
The University of British Columbia. n.d. “Xinjiang Documentation Project.” Accessed April 29, 2025.
https://xinjiang.sppga.ubc.ca/